ঈদের আগে আগে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের সুযোগ দেওয়ায় পদ্মা সেতুর টোল আদায় অনেকটাই বেড়ে গেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, গত ২০ এপ্রিল ভোর থেকে ২৫ এপ্রিল রাত পর্যন্ত ছয় দিনে সেতুর আয় বেড়েছে পৌনে এক কোটি টাকার বেশি।
বুধবার রাজধানীর সেতুভবনে সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি এই হিসাবও দেন তিনি।
২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতু চালুর দিন কিছু বাইকারের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের পর রাতেই মোটরসাইকেল দিয়ে এই সেতু পারাপার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রায় এক বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে এবার ঈদের আগে নানা শর্তে তা প্রত্যাহার করা হয়।
বাইকারদেরকে নির্দিষ্ট লেন মেনে চলা, সেতুর মধ্যে না দাঁড়ানো, সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে চলাসহ নানা শর্তে এই সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু বাইকার শর্ত ভঙ্গ করে জরিমানা দিলেও এবার সেভাবে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি।
মন্ত্রী বলেন, ২০ এপ্রিল পদ্মাসেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত (২৫ এপ্রিল রাত) ৭৭ হাজার মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৭৭ লাখ টাকা।
সেতু চালু হওয়ার ১০ মাসে টোল আদায় হয়েছে ৬৬০ কোটি টাকা। এই আয়ের মধ্যে সেতু নির্মাণের খরচের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ৩১৬ কোটি টাকা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আগামী জুন মাসে পরের কিস্তির অর্থ জমা দেওয়া হবে।
মত বিনিময়ে কাদের জানান, চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঈদযাত্রা স্বস্তির, তবে দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ
এবারের ঈদযাত্রা ও শহরে ফেরা নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি মনে করেন, রাস্তা ভালো থাকায় সম্মিলিত প্রয়াসে এবারের ঈদযাত্রা ও কর্মস্থলে ফেরার যাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “এবারের ঈদে সম্মিলিত প্রয়াস ছিল, রাস্তা ছিল ভালো, পাসএবল ও ইউজএবল। যে কারণে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। যানজটের দুর্ভাবনা অতীতে যেটা ছিল এ পর্যন্ত সেটি হয়নি।
“বিশেষ করে বিআরটি প্রকল্প এলাকায় যানজটের যে আশঙ্কা করা হয়েছিল সেটা হয়নি। সামনের দিনে এ ধারাকে আরও ইতিবাচক করতে হবে। ভুলক্রুটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কিন্তু দুর্ঘটনা নামক দুর্ভাবনা তেমন একটা কমেনি। এত সেতু, এত রাস্তা করা হলো তারপরও এখানে ইতিবাচক অগ্রগতি সেভাবে হচ্ছে না।”
তবে হাল ছাড়ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “কাজটা (দুর্ঘটনা কমানো) চ্যালেঞ্জিং। এটা অতিক্রম করা সম্ভব। ইতিমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার সড়কে নিরাপত্তা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।”
ঈদুল আজহার প্রস্তুতি এখন থেকেই
দুই মাস পরে যে ঈদুল আজহা আসছে, সে সময়ের ঈদযাত্রাকেও স্বস্তিদায়ক ও নির্বিঘ্ন করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতেও সবাইকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আগামী ঈদযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হবে গরুর হাট, পশুবাহী গাড়ি ও বৃষ্টি। কাজেই ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহা আরও চ্যালেঞ্জিং।”
সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, সেতু ও সেতু কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।