Published : 23 Oct 2024, 02:12 PM
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ‘হামলায়’ ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ৯ জন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকি ১৬ জনকে একই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গভবনের সামনে মঙ্গলবার দায়িত্বরত পুলিশের বেশিরভাগ সদস্যই কমবেশি ‘ইট-পাটকেল, মারধরের শিকার হয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন ডিএমপি মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং আন্দোলনকারীরা পদত্যাগ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয় মূলত সন্ধ্যার পরে। ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। সে সময় পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করে। এ সময় অন্তত তিন জন আহত হন। তবে তাদের আঘাত ‘গুরুতর নয় বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক।
পরে পুলিশের ওপর চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা। তারা পুলিশের একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। গাড়িতে উঠে পুলিশকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়।
রাত পৌনে ১০টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে একদল বিক্ষোভকারী বঙ্গভবনের ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের আবার সংঘাত হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ঢিল ছুড়তে থাকলে পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে সরে যায়।
সে সময় সেনাবাহিনীর একটি দলকে বেশ কিছু সাঁজোয়া যানসহ পাহারায় থাকতে দেখা যায়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, "রাতে আমরা যারা ছিলাম তাদের প্রায় সবাই মারধর হামলার শিকার হয়েছি। এদের মধ্যে অনেককেই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।"
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আইনশৃঙ্খলার আরও অনেক বাহিনী নিয়োজিত ছিল। কিন্তু বোঝেনইতো, কিছু হলেই পুলিশকে সামনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, আবারও পুলিশকেই হামলার শিকার হতে হল।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে এবং ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়। ভাঙচুর করে লুটপাটের চালিয়ে এসব স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে কনস্টেবলই ২১ জন।
দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ উত্তেজনার পর বঙ্গভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে কোনো আন্দোলনকারীকে জড়ো হতে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।
বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ধাপে ব্যারিকেডসহ বসানো হয়েছে কাঁটা তারের বেড়া। সেখানে সেনা সদস্যের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি, জলকামানসহ রায়ট কার।
উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, "যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের ব্যপক প্রস্তুতি রয়েছে।"
বঙ্গভবন এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করার কথা জানিয়েছে বাহিনীর সদর দপ্তর।
বিজিবির উপ মহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, তারা (বিজিবি) অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন।
তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, সে বিষয়টি নিয়ে আড়াই মাস পর বিতর্ক তৈরি হয় রাষ্ট্রপতির একটি কথায়।
দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনেছেন, কিন্তু কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।
ওই বক্তব্য মানবজমিনের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন। প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে।
বঙ্গভবন এলাকা থমথমে, নিরাপত্তা বাড়াতে কাঁটাতারের বেড়া
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি: বঙ্গভবনের সামনে গভীর রাতেও বিক্ষোভ
'অসত্য' বক্তব্যে রাষ্ট্রপতির 'বিশেষ উদ্দেশ্য': বিএনপির জয়নুল