অভিযান পরিচালনাকারী সেনা কর্মকর্তা এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Published : 01 Oct 2024, 10:10 PM
গুম হওয়া পরিবারগুলোর প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা তুলির ভাইকে বাসা থেকে ধরে সেনাক্যাম্পে নিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।
তারা সেই অভিযান পরিচালনাকারী সেনা কর্মকর্তা এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এসব দাবি বাস্তবায়নে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি; না হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি।
আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনটি বিএনপির ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সানজিদা তুলি বলেন, সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের শাহিনবাগের বাসায় এসে তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে তুলে নিয়ে যায়।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর দলটি তার মা ৭৫ বয়সী হাজেরা খাতুনকে দোতলার একটি ঘরে নিয়ে সেখান থেকে বের হতে দেয়নি। আর তার আরেক ভাই গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে ‘অস্ত্রের মুখে টেনেহিঁচড়ে’ নিয়ে যায়।
সেনা সদস্যরা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ‘নষ্ট করার চেষ্টা’ চালায় বলে অভিযোগ করেন সানজিদা তুলি।
তিনি বলেন, পরে তারা শ্যামলকে ধরে নিয়ে যায় তেজগাঁও সেনা ক্যাম্পে। সেখানে তাকে অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজিসহ ‘বিভিন্ন অভিযোগে জড়িয়ে’ একটি কাগজে ‘স্বীকারোক্তিমূলক স্বাক্ষর’ দিতে বলে। তবে শ্যামল তা দেননি। সাড়ে ৫টার দিকে শ্যামলকে বাসায় দিয়ে যায় তারা।
অভিযোগে তুলি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি এক ধরনের কৌশল; যা ভুক্তভোগীদের পরিবারকে চাপ দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে, যারা গুমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা শুরু করেছে।”
এই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার প্রেক্ষাপটে সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনীর ভাষ্য প্রকাশ করেছিল আইএসপিআর।
সেখানে বলা হয়, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই’ শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়েছিল। পরে আবার তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
অভিযানের সময় ‘রূঢ় আচরণের’ অভিযোগ অস্বীকার করা হয় আইএসপিআর এর পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার মায়ের ডাকের সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “আমরা সরকারকে বলেছিলাম, সেনাবাহিনীকে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলে সেটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তার বদলে সেনাবাহিনীর প্রতিটি দলের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া যেতে পারে। এখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা বিতর্ক কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি কিন্তু প্রশ্নের মুখে পড়ল। আমাদের আশঙ্কা সত্য হয়ে যাচ্ছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, “এটুকু বলতে চাই, আমাদের সংগ্রামটা একটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। হয়ত সামনে আরও বড় সংগ্রাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। হয়ত দেশকে দ্বিতীয় স্বাধীনতার পূর্ণতার জন্য আমাদের আবার রক্ত দেওয়া লাগতে পারে, জীবন দেওয়া লাগতে পারে। আমরা সেজন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত, আমি এ ঘোষণাটি এখান থেকে দিতে চাই।
“আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, মায়ের ডাকের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একাত্মতা ঘোষণা করছে।”
বিএনপির তাবিথ আউয়াল বলেন, বিষয়টি নিয়ে তার দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে এখানে আর কিছু বলতে চান না।