বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের প্রবেশাধিকার ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রিট আবেদন

রংপুরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি শিশুকে পার্কে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এ রিট মামলায়।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2023, 01:49 PM
Updated : 16 May 2023, 01:49 PM

রংপুরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি শিশুকে পার্কে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে হাই কোর্টে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তনয় সাহা ও ফয়সাল আহমেদ রনি জনস্বার্থে এ রিট মামলা করেছেন।

সব সরকারি পার্কে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ‘ফ্রি’ এবং বেসরকারি পার্কে ৫০ শতাংশ ছাড়ে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে সেখানে।

আইনজীবী তনয় কুমার সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রিট আবেদনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, রংপুরের জেলা প্রশাসক, চিকলী ওয়াটার পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিবাদী করেছেন তিনি।

‘পার্কে ঢুকতে দেওয়া হলো না বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে’ শিরোনামে গত ৭ মে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে এ রিট করা হয়।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন অনুসারে চিকলি ওয়াটার পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে কেন প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে আবেদনে।

একই সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পার্ক, বিনোদন পার্ক, শপিং কমপ্লেক্স, মার্কেট, রেস্তোরাঁ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি ও হুইল চেয়ার চলাচলের জন্য র‌্যাম্প রাখার নিশ্চয়তা কেন দেওয়া হবে না এবং সরকারি পার্কে একজন অভিভাবকসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ ও রাইডের ব্যবহার এবং বেসরকারি পার্কে ৫০ শতাংশ ছাড়ে প্রবেশের সুযোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না– সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত গত ৭ মের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ১১ বছর বয়সী মেয়েটিকে নিয়ে তার মা রংপুরের চিকলি ওয়াটার পার্কে গেলে তাদের আটকে দিয়ে বলা হয়, হুইলচেয়ার নিয়ে ভেতরে যেতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। পরে তাদের হুইল চেয়ার বাইরে রেখে পার্কে প্রবেশ করতে বলা হয়।

শিশুটির মাকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি লিখেছে, “মা হিসেবে কতবার অনুরোধ করলাম, আমি আছি, আমার মেয়ে কারও কোনো ক্ষতি করবে না, সে অ্যারোগেন্ট না, খুবই শান্ত বাচ্চা। কেউ কোনো অভিযোগ করবে না। কিন্তু তার একই জবাব, অথরিটি নিষেধ করেছে হুইলচেয়ার পার্কের ভেতরে নিতে। অথচ এত অনুরোধ করছি আমি তখন। আমার মেয়েটা ভেতরে তাকাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে। তার ভেতরে যাওয়ার আকুলতা আমি মা হিসেবে বুঝি। আমাদের মা-মেয়েকে পার্ক কর্তৃপক্ষ চরমভাবে অপমান করেছে, হেয় করেছে। একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মা হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকারসমূহ যাহাতে তাহারা যথাযথ সহজ উপায়ে ভোগ করিতে পারে সেই লক্ষ্যে সকল সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, আপতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত নীতি ও প্রদত্ত নির্দেশনা ও অন্যান্য কমিটি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত ও প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি বা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিবে।”