“আমাদের যেটুকু স্বার্থ আছে, আমরা সেটুকু সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাব,” বলেন তিনি।
Published : 02 Oct 2024, 12:14 AM
মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন বাদ রেখে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বার্তা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা এসেছে উপদেষ্টাদের বক্তব্যে। এর আগে ‘টানাপোড়েন’ পেরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ চাওয়ার কথাও বলেছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকও হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।
ওই বৈঠকে একাত্তরে ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উঠেছে কি না, এমন প্রশ্নে মঙ্গলবার তৌহিদ হোসেন বলেন, “সৌজন্য সাক্ষাতে কঠিন বিষয়গুলো তোলা হয় না। যখন আলোচনার টেবিলে বসব, তখন এই বিষয় আলোচনা তুলব।”
একাত্তরকে বাদ রেখে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “না। আমরা মোটেই তাদেরকে এ প্রসঙ্গে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করিনি যে, একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমরা ভালো সম্পর্ক রাখব। ভালো সম্পর্ক নিশ্চয় করার চেষ্টা করব, একাত্তরও থাকবে।”
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন।
ওই প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “৫২ বছরের একটা বিষয়, সেটা কাল সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। তবে যখন আমরা আলোচনার টেবিলে বসব, তখন ইস্যুটি থাকতে হবে। পাকিস্তানের হাই কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, এ ধরনের কাছাকাছি বক্তব্য তাদের নেতাদের কাছ থেকে আগেও এসেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ না করে কেবল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ‘শহীদদের’ স্মরণ করার এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “একাত্তরের বিষয়ে আমাদের কারও কোনো সন্দেহ বা দ্বিধা কখনোই ছিল না। এবং একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আমরা অহরহই জানিয়ে থাকি।
“এখনকার পরিস্থিতি যাদের উপলক্ষে সৃষ্টি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। তার মানে এই না, একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব আছে, কখনোই, কোনো ক্ষেত্রেই। সেটা প্রতিবার উল্লেখ না করলেও কিন্তু সেটা থাকবে।”
আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি মনে করি পাকিস্তান যদি এ সাহস টুকু দেখায়, এখানে ১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা উদ্ধৃত করে তারা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, এটাতে দোষের কিছু নেই। জাপান কিন্তু গত ৭০ বছর ধরে তাদের কৃতকর্মের জন্য মাফ চেয়ে যাচ্ছে।
“তারা যদি এটুকু সাহস দেখাতে পারে, এ কথাটুকু বলতে পারে, সম্পর্ক স্বাভাবিক ও সহজ করা আরও সহজ হয়ে আসবে।”
তিনি বলেন, “পাশাপাশি আমি মনে করি যে, এ কারণেই সম্পর্কটা আটকে রাখা সেটারও কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা তো সম্পর্ক বজায় রেখেও আসছিলাম। সেটা গত কয়েক বছরে, ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকটা, আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এমন ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল।”
অপর এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি মনে করি যে, স্বার্থ যেখানে আছে, সেখানে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই উচিত।…পাকিস্তানের তো স্বার্থ আছে, আমাদের যেটুকু স্বার্থ আছে, আমরা সেটুকু সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাব।”
আরও পড়ুন-
পাকিস্তানের সঙ্গে 'স্বাভাবিক', ভারতের সঙ্গে 'জনকেন্দ্রিক' সম্পর্ক
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক, সম্পর্ক জোরদারে সম্মতি