‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের’ যুগ্ম সমন্বয়কারী বলছেন, চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় নৃগোষ্ঠীর মানবিক অধিকারও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
Published : 02 Dec 2024, 07:58 PM
‘দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা’ পাহাড়ে সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের’ যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক মনে করেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ের মানুষ আরো বেশি প্রান্তিক হয়ে পড়ছে।
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর: প্রত্যাশা ও অগ্রগতি' শীর্ষক সভায় এ মত প্রকাশ করেন খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার বিস্তারিত জানিয়েছে সংগঠনটি।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে খায়রুল ইসলাম বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা থেকেই সংসদে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা ব্রিটিশ-পাকিস্তান সময়ের রাজতন্ত্র ভেঙে গণতান্ত্রিক স্রোতধারায় অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের সবসময় দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সূত্রপাট ঘটে।
“এ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আরো বেশি প্রান্তিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারণে দেশের নৃগোষ্ঠীর মানবিক অধিকারও ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।"
সভায় মূল নিবন্ধ পড়ে শোনান পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ন সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন শুধুমাত্র এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য নয়, দেশের আদিবাসী জনগণের অধিকার এবং জাতিগত ঐক্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।”
সভায় দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ। কিন্তু আমরা যে দৃশ্য মিছিলে দেখেছি, সে দৃশ্য অন্তর্বর্তী সরকারে আছে বলে মনে হয় না।
“আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ কেবল বাঙালির রাষ্ট্র নয়, গারো, হাজং, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মনিপুরি খাসিয়া — সবার রাষ্ট্র। বাংলাদেশ কেবল মুসলমানের দেশ নয়, এদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার। এদেশে যদি মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন তৎপরতা চালাতে পারে, তাহলে হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনও তৎপরতা চালাতে পারবে। মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন যদি নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ারও যুক্তি নেই।"
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, নাগরিক ঐক্যর প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আব্দুল মাহবুব, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথেন প্রমীলা ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অনিক রায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা।