কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং গাজীপুরের কাশিপুর কারাগারের বাইরে সকাল থেকেই ভিড় করেন স্বজনরা।
Published : 23 Jan 2025, 12:04 PM
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১৬ বছর ধরে কারাগারে আটক ১৬৮ জন সাবেক বিডিআর জওয়ান অবশেষে জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন।
তাদের মুক্তির দিন থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাইরে ভিড় করেন নানা বয়সী স্বজনরা। অনেকের হাতে দেখা যায় ফুল।
গাজীপুরের কাশিপুর কারাগারের বাইরেও স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। অনেকে সেখানে মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন প্রিয়জনের জন্য।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই সদস্যরা হত্যা মামলায় খালাস পেলেও বিস্ফোরক মামলার কারণে কারাগারে আটকে ছিলেন প্রায় ১৬ বছর ধরে।
ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া গত রোববার বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর মঙ্গলবার জামিনপ্রাপ্ত ১৭৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এদিন মোট ১৬৮ জন মুক্তি পাচ্ছেন জানিয়ে ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি (প্রিজন) জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪১ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৬ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৮৯ জন এবং কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২ জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পাচ্ছেন।
বুধবার তাদের জামিননামা দাখিল করা হয়। এরপর তাদের জামিন সংক্রান্ত নথিপত্র কারাগারে গেলে শুরু হয় মুক্তির প্রস্তুতি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এম কে এম মাসুম দুপুর পৌনে ১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিলখানার ঘটনায় ৪১ জন আমাদের এখানে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বের হবেন।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
অন্যদিকে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।
অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরালো হয়। এরপর ওই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করে দেয় সরকার। কমিশনকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
পুরনো খবর