“ও চলে গেছে, আমরা এখন নিজেদের মতো করেই বাঁচতে চাই। কারো কাছেই এখন আমাদের চাওয়ার কিছু নাই,” বলছেন এক স্বজন।
Published : 30 Aug 2024, 05:25 PM
দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মমিন পাটোয়ারী, যিনি গত ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছিলেন বলে তার দলের অভিযোগ।
শুক্রবার ভোরে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
৫৪ বছর বয়সী মমিন পাটোয়ারি ছাত্রলীগের লিয়াকত-বাবু কমিটির কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। সবশেষ তিনি আওয়ামী লীগের একটি উপ-কমিটিতে সহসম্পাদক এবং লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার ঘরে এক পুত্র সন্তান আছে।
আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে বলা হয়েছে, গত ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ‘বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে’ আহত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক এম এ মমিন পাটোয়ারী শুক্রবার রাত চারটায় ইন্তেকাল করেন।
তবে মমিনের একজন স্বজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মমিনকে কেউ মারধর করেছিল কি না বা কারা, কোথায় মারধর করেছে তা তিনি স্বজনদের বলে যেতে পারেননি। তবে তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন, তার ফোনে চিৎকার সব মিলিয়ে স্বজনরা মনে করছেন তিনি মারধরের শিকার হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মৃতের ওই স্বজন জানান, ১৫ অগাস্ট সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হন মমিন। তিনি ৭টা ৪০ মিনিটে ওই স্বজনকে ফোন করে বিকাশে এক লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। এসময় তাকে কেউ মারধর করছিল এবং তিনি ফোন চালু রেখেই বলছিলেন, ‘আর মাইরেন না’। মমিন টাকা পাঠানোর জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি নম্বরও দেন।
তখন ওই স্বজন এক আত্মীয়কে ফোন করে সহায়তা চান। ওই আত্মীয় মমিনের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে টাকা পাঠানোর জন্য আরেকটি নম্বর দেওয়া হয়।
টাকা পাঠানোর কিছুক্ষণ পর মমিন ফোন করে স্বজনকে জানান, তাকে ছেড়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। মমিন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জানিয়ে টাকা পাঠানো আত্মীয়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের কাছে দাঁড়াতে বলেন।
পরে মমিন রিকশা নিয়ে সেই পর্যন্ত এসে অটোরিকশায় ওঠেন। এরপর পরিবারের লোকজনের সিদ্ধান্তে তাকে নেওয়া হয় টিকাটুলির সালাউদ্দিন হাসপাতালে।
মমিনের ফোন পাওয়া প্রথম স্বজন বলছেন, “তিনি আমাদেরকে কিছুই বলে যেতে পারেননি। হাসপাতালে নেওয়ার সময় দেখি, তিনি খুব অস্থির ছিলেন। আমরা যখন বলছি, কী হইছে? তখন ও বলছে, ‘আগে একটু রেস্ট নেই, পরে বলতেছি’। বোঝা গেছে যে তাকে কিছু লোক ধরে মারছে, তবে ও আমাদের বলতে পারেনি। বেলা ৩টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালে যতোক্ষণ ছিলেন, ততোক্ষণ ঘুমিয়েই ছিলেন।
“কিন্তু ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেন তার প্রেসার কমে যাচ্ছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে। তারা দ্রুত তাকে আইসিইউ আছে- এমন হাসপাতালে নিয়ে বলেন। এরপর খুঁজে পেয়ে তাকে গ্রিনরোডের গ্রিনলাইফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আনার পর পরীক্ষা করেই ডাক্তাররা জানিয়ে দেন তার অবস্থা খুব খারাপ, আইসিইউতে নিতে হবে। এরপর এই কয়দিন তিনি আইসিইউতেই ছিলেন।”
মমিনের এই স্বজনের ভাষ্য, “তার হাঁটুতে, পিঠে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে আমরা কিছুই জানতে পারিনি কীভাবে কী হলো।”
এখন কোনো ব্যবস্থা নিতে চান কি না, এ প্রশ্নের তিনি বলেন, “আমরা এখন কিছুই চাই না। ও চলে গেছে, আমরা এখন নিজেদের মতো করেই বাঁচতে চাই। কারো কাছেই এখন আমাদের চাওয়ার কিছু নাই।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে মাঠে ছিল না পুলিশ। এ কারণে তাদের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।