Published : 01 May 2025, 12:58 AM
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি এবং জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন মামলায় সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের আসামি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলা কিংবা চাকরিচ্যুতির ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।
অভিনেতা সিদ্দিকের ওপর হামলার ঘটনাটিকেও ‘নিন্দনীয়’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বুধবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলেছে, চার জেলায় কমপক্ষে ১৩৭ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। সংস্কৃতিকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে।
গণমাধ্যমের বরাতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার কার্যালয়ে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনের ঘটনাও তুলে ধরা হয় এ বিজ্ঞপ্তিতে। ওই ঘটনার পর তিন সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছে বলে লিখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে করা ৩২টি ফৌজদারি মামলায় অন্তত ১৩৭ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এমনকি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও মামলা করা হয়েছে। অথচ গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল বলে গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সংবাদ বেরিয়েছিল। কমিটি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণ করবে এবং সময়ে সময়ে মামলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।
”অথচ কমিটি গঠনের পরেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া কমিটি গঠনের পূর্বেকার মামলাগুলোর বিষয়েও কোনো ধরনের পদক্ষেপ স্পষ্ট নয়।”
আসক বলেছে, “স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলা কিংবা চাকরিচ্যুতির ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। আইন ও সালিশ কেন্দ্র গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং যেকোনো সাংবাদিককে হয়রানি, নির্যাতন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কোনো ধরনের চাপ কিংবা হস্তক্ষেপের ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে।
“এ ধরনের ঘটনা সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং জবাবদিহিতা সংকুচিত করে তোলে।”
সংস্কৃতি কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এটি সত্যিকার অর্থেই সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি বিরূপ, বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা বলেই বিবেচিত হয়। সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনয় শিল্পীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি। বরং বেআইনি ‘মব’ তৈরি করে নাগরিকের মর্যাদাহানি ও স্বাধীন চলাফেরায় হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
“গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় একজন অভিনয়শিল্পীকে বেআইনি ‘মব’ কর্তৃক আক্রান্ত হতে দেখা গেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের বেআইনি ‘মব’ সচেতন নাগরিকদের হতাশ ও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট বলে দৃশ্যমান নয়। আসক মনে করে, এ ধরনের ঘটনা সুশাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।”
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিও (ডিআরইউ)।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করা এবং তার সঙ্গে সাংবাদিকদের পাল্টাপাল্টি কথার পর বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়। এর মধ্যেই দীপ্ত টিভির বুলেটিন কয়েক ঘণ্টা বন্ধ এবং সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ঘটনা ঘটে।
ওই সংবাদ সম্মেলনের পরদিন দীপ্ত টিভির সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানুর রহমান, এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী ও চ্যানেল আই অনলাইনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়।
মঙ্গলবার এ নিয়ে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেনি সরকার। ‘গণহত্যার পক্ষে’ প্রশ্ন করায় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন-
উপদেষ্টা ফারুকীকে প্রশ্নের পর দীপ্ত টিভির খবর বন্ধ, চাকরি গেল ৩