“ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে গুম করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এখনো পাইনি,” বলছেন কমিশন চেয়ারম্যান।
Published : 05 Nov 2024, 05:19 PM
গুম সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে সরকার গঠিত কমিশনে দেড়মাসে এক হাজার ছয়শ অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৩৮৩টি অভিযোগ যাচাই করে কমিশন জানাচ্ছে, এর মধ্যে ১৭২টি অভিযোগই এসেছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাবের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য তুলে ধরেন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব অভিযোগ তদন্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ডাকতে ‘সমন জারি’ করা হচ্ছে।
“আমরা আপাতত সমন করেছি সাতজনকে। এরা সবাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ডিজিএফআইর সদস্য।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কমিশনে গুমের ১ হাজার ৬০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে তারা ৩৮৩টি অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক যাচাই করেছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে র্যাবের বিরুদ্ধে ১৭২টি, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) বিরুদ্ধে ৩৭টি, ডিবির বিরুদ্ধে ৫৫টি, ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ২৬টি, পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি এবং অন্যান্যভাবে ৬৮টি গুমের অভিযোগ এসেছে।
অভিযোগের বিষয়ে কমিশন ইতোমধ্যে ১৪০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে জানিয়ে বিচারপতি মঈনুল বলেন, অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এসব বাহিনীর আটটি গোপন বন্দিশালা পেয়েছে কমিশন, যেখানে বছরের পর বছর গুম হওয়া ব্যক্তিদের রেখে নির্যাতন করা হতো।
কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল বলেন, “২০১৬ সালের দিকেই গ্রেপ্তারের সময় কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ধারণা করা যায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই নির্দেশনাগুলোর লঙ্ঘন করে এসেছে।”
তিনি বলেন, “(বর্তমান) আইজিপি সাহেব দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরে আসার পর তাকে একটা চিঠি দিয়ে এখানে নিয়ে আসব। আসার পরে বলব, ‘আপনি একটা ফ্রেশ সার্কুলার দেন’; যাতে তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) প্রতি আপিল বিভাগের দেওয়া নির্দেশনাগুলো তারা মেনে চলে। তাহলে মানুষের ভোগান্তি হবে, মানবাধিকারের লঙ্ঘন হবে না।”
ভুক্তভোগীরা কেন গুমের শিকার হয়েছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “কিছু লোক আছে অ্যাপারেন্টলি পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি ছিল না। কিছু আছে সরকারের সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মিডিয়াতে।
“আবার সেনাবাহিনীর যাদের গুম করা হয়েছে, তাদের কেন করা হয়েছে তা বোঝা গেল না। যেমন কর্নেল হাসিনকে দুইবার গুম করা হয়। একবার করা হয় তিনি চাকরিরত অবস্থায়, আরেকবার রিটায়ারমেন্টের পর। কী কারণে ওনাকে করল- ওটা বোঝা বড় মুশকিল।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে গুম করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এখনো পাইনি।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ‘আয়নাঘর’ বা গোপন বন্দিশালা থেকে তিনজনের মুক্তি পাওয়ার খবর মিলেছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির চেয়ারম্যান মঈনুল বলেন, “এই মুহূর্তে কতোজন গুম আছে তা বলা মুশকিল। এমনও ঘটনা আছে কে নিয়ে গেল- সেটা ট্রেস করা যায়নি। এমনও যদি হয় কোনো ভাড়াটে লোক ধরে নিয়ে গেছে!”
তার ভাষ্য, গুম হওয়া ব্যক্তিদের যেসব গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতন করা হতো, সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। আলামত নষ্ট করা হয়েছে।
“তবে যারা আলামত নষ্ট করছেন, তাদের গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। আলামত ধ্বংস না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক 'আয়নাঘর' বা যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যাদি” সম্পাদনের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা যাবে।