সেনাশাসনে থাকা মিশরে পশ্চিমারা যে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তা দেখালেন রাজ্জাক।
Published : 21 May 2023, 09:23 PM
যুক্তরাষ্ট্রের ‘আরও নিষেধাজ্ঞা’ আসবে- এমন আশঙ্কা করছেন না আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
কেন মনে করছেন না, তা বোঝাতে আফ্রিকার দেশ মিশরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামনে এনেছেন তিনি।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি বলেন, মিশরের সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টকে জেলে ভরে মেরে ফেললেও দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা ঠিকঠাকভাবেই অব্যাহত রয়েছে।
মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি দেশটির সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়েছিলেন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
প্রথম দিকে মিশরীয় সেনাবাহিনীর এমন তৎপরতার সমালোচনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পরবর্তীকালে শর্তসাপেক্ষে দেশটিতে সামরিক ও বেসামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব।
বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র ‘আরও নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে’- একটি জাতীয় দৈনিকের এমন খবরের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
মন্ত্রী বলেন, “স্যাংশনের বিষয়ে কোনো পত্রিকা হয়ত কিছু লিখতে পারে। আমার ধারণা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেগুলো বলেছেন সঠিকই বলেছেন। স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কোনোদিনই কামনা করি না বা সহজভাবে নিতে পারি না।”
র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে তিনি বলেন, “যেভাবে এখানে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল, যেভাবে র্যাব জঙ্গিকে দমন করেছে, আইএসআইকে দমন করেছে। সেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাস্তববাদী হতে হয়েছে।
“বাস্তবতার আলোকে, দেশ ও জাতির স্বার্থে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেররিজমের রিরুদ্ধে আমাদের যে আন্দোলন, বিশেষ করে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে… সেটার জন্য যদি স্যাংশন দেয়, সেই স্যাংশনটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?”
“বিএনপি ও তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কিছু বিদেশি শক্তি যেসব অভিযোগ প্রতিদিনই আনছে, এসব মিলিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হয়,” যোগ করেন মন্ত্রী।
নিষেধাজ্ঞা, বিদেশি হস্তক্ষেপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরব দেশ মিশরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টেনে রাজ্জাক বলেন, “আমি বলি যে, মিশরে কি গণতন্ত্র আছে? নির্বাচিত হয়ে তো একজন প্রেসিডেন্ট হয়েছিল। এখন যারা ক্ষমতায় আছে- সেনাবাহিনী… তারা তাকেই তো মেরে ফেলছে। সেখানে তো সেনাবাহিনী নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে জেলে ভরার ছয় মাসের মধ্যে ৮০০ মিলিয়ন তারা সহযোগিতা দিয়েছে। আমাদেরকে কয় মিলিয়ন ডলার দিয়েছে?” নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসছে না বলেই ধারণা করছেন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
তিনি বলেন, “স্যাংশন কেন দেবে? আমার ধারণা যে, তারা স্যাংশন দেবে না। তারা বাস্তবতাটা বুঝবে এবং তারা একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আমাদেরকে সহযোগিতা করবে।
“আমি একজন আশাবাদী মানুষ। পত্রিকায় যাই রিপোর্ট আসুক। অ্যামেরিকা আর কোনো স্যাংশন দেবে বলে আমি মনে করি না। আর স্যাংশন যদি দেয়, তাহলে একটা স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদেরকে এর মধ্যেই চলতে হবে।”
কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলে তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করা হবে না বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই বক্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কেনা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, “স্যাংশন যেটা দিয়েছে, সেটা মেনে তো আমরা চলছি। আরও যদি স্যাংশন দেয়, সে প্রসঙ্গে আমরা বলছি, পৃথিবীর সব দেশেই শিল্প-বাণিজ্য চলছে। চীনের বিরুদ্ধে কত কথা বলেছে। চীনের পণ্য তো যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ভরপুর। ওইভাবে পণ্য বন্ধ করা যায় না। যদি একদম নিষিদ্ধ করে দেয়, যেমন বাংলাদেশের গার্মেন্টস নেবে না বা অমুক পণ্য নেবে না… আমার মনে হয় না যে আমেরিকা বাংলাদেশে এ ধরনের স্যাংশন দেবে।”