ক্ষমতার পালাবদলে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন ও রদবদলের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত এল।
Published : 17 Aug 2024, 09:43 PM
এক যুগেরও বেশি জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ আঁকড়ে থাকা লিয়াকত আলী লাকীসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
তাদের সবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা।
শনিবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ প্রজ্ঞাপন জারি করে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা কর্মকর্তারা হলেন- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর।
এই চারজনের সঙ্গে একই প্রজ্ঞাপনে ভারতে বাংলাদেশ মিশনের প্রেস ইউংয়ের উপ-হাইকমিশন রঞ্জন সেনের (প্রথম সচিব) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে তাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন ও রদবদলের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত এল।
গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চার দিনের মাথায় শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের প্রধান উদ্দেশে হিসেবে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের’ কথা।
৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন বা পদায়ন শুরু হয়।
সেই ধারায় শনিবার পাঁচজনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের সম্পাদিত চুক্তিপত্রের অনুচ্ছেদ-৮ অনুযায়ী তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১২ অগাস্ট পদত্যাগ করার কথা বলেছিলেন শিল্পকলার লাকী। তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন।
এর আগে ১০ অগাস্ট বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আসকারী পদত্যাগ করার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন।
আসকারী তখন বলেছিলেন, "উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগ করেছি।”
আসকারী গত ১৮ জুলাই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বাংলা একাডেমিতে মুহম্মদ নূরুল হুদার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯ ও ২০ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২১-২৩ জুলাই সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি থাকায় তিনি ২৪ জুলাই কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। সেদিন থেকেই তার নিয়োগ কার্যকর হয়েছিল।
এদিকে এক যুগেরও বেশি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ আঁকড়ে ছিলেন লাকী। এই পদে এতদিন থাকার নজির আর কারও নেই। ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল তিনি প্রথম নিয়োগ পান।
পরে ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ, ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ, ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল এবং সবশেষ ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সপ্তমবারের মতো পুনঃনিয়োগ পান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে লাকীর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভ তৈরি হয়। তার বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল তাকে।
লাকী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতির পদেও বসে আছেন দীর্ঘদিন। ফেডারেশানের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায়ও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
লাকীর প্রতিক্রিয়াতেই ফেডারেশান ছাড়ে ঢাকা থিয়েটার। গত বছরের জুনে ‘সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ' ব্যানারে লিয়াকত আলী লাকীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি অংশ। তবু তিনি পদ আঁকড়ে ছিলেন।