দুদকের উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে গঠন করা এই কমিটির আরেক সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন।
Published : 28 Aug 2024, 06:11 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুদকের উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে গঠন করা এই কমিটির আরেক সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন। গত ১৯ অগাস্ট এই কমিটি দুদক গঠন করেছে।
হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অনুসন্ধান শুরুর বিষয়টি জানালেও বিস্তারিত বলতে চাননি।
কমিটি গঠনের আগের দিন আসাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। অভিযোগ অনুসন্ধানের পর যাচাই বাছাই ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সাবেক এই ডিএমপি কমিশনারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান গত ২৭ জুন আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন।
সেখানে তিনি বলেন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের বিপুল সম্পদের খবর সংবাদমাধ্যমে এলেও তা নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু না করায় তিনি চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছেন।
আছাদুজ্জামানের সম্পদের তথ্য নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক মানবজমিন, পরে আরও কয়েকটি পত্রিকায় আছাদুজ্জামানের ‘বিপুল সম্পদের’ তথ্য তুলে ধরা হয়।
গত ১৬ জুন ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ শিরোনামে মানবজমিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাড়ির পর বাড়ি। জমি এবং ফ্ল্যাটের সারি। কী নেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শুধু নিজের নামে নয়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের নামেও বিপুল সম্পত্তি গড়েছেন ডিএমপি’র সাবেক এই কমিশনার।"
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।”
আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আছাদুজ্জামান মিয়া এবং তার স্ত্রী আফরোজা জামান, দুই ছেলে আসিফ শাহাদাত ও আসিফ মাহাদীন, মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি চিত্র জানতে পেরেছে বিডিনিউজ।
তারা বলছেন, আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশের চাকরির সুবাদে যে পরিমাণ বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদ পেয়েছেন (আনুমানিক ২ কোটি টাকা), তার থেকে ‘কয়েক হাজার গুণ বেশি’ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশে বিভিন্ন প্রান্তে এবং যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনেছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে তিনি কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
আছাদুজ্জামান চাকরিকালে কত টাকা বৈধ উপার্জন করেছেন প্রশ্ন তুলে সেই হিসাবও তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখানো হয়, তিনি বেতন-ভাতা বাবদ সাকল্যে মোট আয় করেছেন প্রায় দুই কোটি টাকা। এর বাইরে পদবি অনুযায়ী পেয়েছেন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। অথচ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক আছাদুজ্জামান পরিবারের দেশে-বিদেশে হাজার কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি। অর্থাৎ, এসব জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, ব্যবসা অপরাধলব্ধ আয়ে গড়া বলে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে।