বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের ৫-১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।
Published : 18 Jan 2025, 04:46 PM
বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুদক যাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী।
তিনি বলেছেন, “যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি- তারা হয় জেলে থাকবে, না হয় বেইলে থাকবে। যাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা রুজু করেছি, তাদের প্রত্যককে গ্রেপ্তারের জন্য প্রচেষ্টা চালাবো। কেউ বাইরে থাকবে না।”
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে শনিবার সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
গত ২ জানুয়ারি এক কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুর্নীতি তদন্তকারী সংস্থাটি জানিয়েছিল, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মাসুদ বিশ্বাসের নামে জমি ও ফ্ল্যাট থাকার তথ্য মিলেছে, তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) জয়নুল আবেদীন শিবলী বলেন, “উনার (মাসুদ বিশ্বাস) বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে, তাকে আজ আদালতে সোপর্দ করার পর আমরা রিমান্ডের আবেদন করব। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আমরা তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
“ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইও পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করবে। আমরা ৫ থেকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করব।”
তিনি বলেন, “আজকে যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা হলো অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। সেখানে তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
“এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য আমরা তাকে রিমান্ডে চাচ্ছি।”
অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘অঢেল সম্পদ ও অর্থপাচারের’ অভিযোগ পাওয়ার পর গতবছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথা জানায় দুদক। কমিশনের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দলকে এই অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর মাসুদ বিশ্বাসের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে ৩ অক্টোবর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি পাঠায় দুদক।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নেওয়া শুরু করে দুদক। এর ধারাবাহিকতায় মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামে সংস্থাটি।
আর্থিক খাতের গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউয়ের এই সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, তিনি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে’ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে ‘ঘুষের বিনিময়ে’ এর ইতি টেনেছেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে ‘সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনিয়ম ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হিমিদ্রী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছিল। মাসুদ বিশ্বাস ‘আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে’ তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তানাকা গ্রুপ, এসএ গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত ‘নিশ্চিত তথ্য’ থাকা সত্ত্বেও অভিযোগগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে মাসুদ বিশ্বাস ‘ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে’ নথিভুক্ত করেন বলে দুদকের ভাষ্য।
অর্থপাচারেরও আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ‘বিদেশে পাচার’, আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে ‘অনৈতিক সুবিধা’ নিয়ে বিদেশে ‘অর্থপাচার’, জিনাত এন্টারপ্রাইজের অর্থ পাচারের মামলা ‘ঘুষের বিনিময়ে’ ধামাচাপা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের অভিযোগও রয়েছে এর মধ্যে।