"আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, বিশেষ বন্দিদের কেউ বাসার খাবার কেউ খেতে পারছেন না, মোবাইলই ব্যবহার করতে পারছেন না।”
Published : 10 Mar 2025, 03:02 PM
আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত সাত মাসে কারাগারে দায়িত্বরত ১২ জনকে চাকরিচ্যুত করাসহ ৮২৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
যাদের মধ্যে কারারক্ষী, প্রধান কারারক্ষী সার্জেন্টসহ বিভিন্ন পদবির কয়েকজন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন।
এছাড়া ৬ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর, ৮৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ২৭০জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ২৬০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, ২৯ জনকে কৈফিয়ত তলব, ২১ জনকে চূড়ান্ত সতর্ক, ৩৯ জনকে তাৎক্ষনিক বদলি এবং ১০২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলি করার কথা জানিয়েছে অধিদপ্তর।
সোমবার দুপুরে ঢাকার বকশীবাজারে কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, "কোন আর্থিক লেনদেন ছাড়া বন্দিদের তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী খাবারসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিতের জন্য জেল সুপার এবং ডিআইজিদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
"এক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের দ্রুততার সাথে জাবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে।"
তথ্য প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বর্তমান প্রশাসন বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না বলেও জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন।
বিশেষ বন্দিরা বাসার খাবারও পাচ্ছেন না, মোবাইলও নয়
কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, কারাগারকে মাদক এবং মোবাইলমুক্ত করার জন্য গত ৩ মাসে শুধুমাত্র কেরাণীগঞ্জ কারাগারেই ২৭৫টি ঝটিকা তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই তল্লাশিতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থসহ ছোট বাটন ফোন এবং মাদক উদ্ধারের কথা বলেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কথা উঠেছে বেশকিছু বিশেষ বন্দি তারা বাসার খাবার খাচ্ছেন, রাজার হালে আছেন। অমি নিশ্চিত করে বলতে পারি কারাগারে ন্যয়সঙ্গত আচরণের প্র্যাকটিস আমরা করছি। শুধু যে বিশেষ বন্দি তা না, যে কোন বন্দির ক্ষেত্রে আমরা ছাড় দিচ্ছি না।
"আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, বাসার খাবার কেউ খেতে পারছেন না, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। কেউ যদি বলেন বিশেষ বন্দিরা কারাগারে মোবাইলে কথা বলতে পারছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, কয়েকটা কারাগার যেগুলো আমি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রেখেছি, ওখানে তারা কোনভাবেই মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না।অন্য জায়গায় করছেন কি না, কারণ তারা সবসময় আমাদের কাছে থাকে না। অনেক সময় তারা রিমান্ডে যান, অনেক সময় আদালতে যান। আমি শতভাগ কারাগারের ভেতরে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি।"
৭০০ জন এখনো পলাতক
৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে এখনও ৭০০ জন পলাতক আছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক মোতাহের হোসেন।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, "এখনো ৭০০ বন্দি পালাতক আছে। আইশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ও জঙ্গি ৭০ জন পলাতকের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৬৯ জন এখনও পলাতক আছে।"
সারা দেশের কারাগারে ৪২ হাজার ৮৭৭ জন বন্দীর ধারণক্ষমতা আছে জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেছেন আজ পর্যন্ত বন্দি আছে ৭০ হাজার ৬৫ জন।
তিনি আরও বলেন, "প্রথম শ্রেণির বন্দি আছে ১৫১ জন, যারা ডিভিশনপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আছেন ৩০ জন, সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৩৮ জন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারি আছেন ৭০ জন এবং অন্যান্য আছেন ১৩ জন।"
"এর বাইরে একটু বিশেষ বন্দি সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সংসদ সদস্য সরকারি কর্মকর্তা এমন ২৪ জন আছেন, যারা ডিভিশন পাননি বিভিন্ন কারণে।"
কারাগারের বন্দি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নানামুখী উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "দেশব্যাপী বন্দি সংক্রান্ত যে কোন তথ্য সংগ্রহের জন্য হটলাইন, বন্দিদের সাক্ষাতকারে ভোগান্তি কমানোর জন্য ডিজিটাল ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট ও আভ্যন্তরীণ বন্দি ব্যবস্থাপনা সহজ করতে সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।"
এছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করা কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বডিক্যাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক জানিয়ে ৬৯টি কারাগারকে নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির আওতায় আনা ও বড় কারাগারগুলোকে সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মোতাহের হোসেন।
কারা মহাপরিদর্শক বলেছেন, কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু করা হয়েছে এবং কেরাণীগঞ্জে আরকটি বিশেষ কারাগার চালুর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এছাড়া রংপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি পুরনো কারাগার সম্পসারনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দিদের নিরাপদ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক অভিযোগ করে বলেছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, পদোন্নতির জট খোলাসহ আভ্যন্তরীণ নানা 'সংস্কার' সত্ত্বেও বিগত ১৫ বছরের কিছু 'সুবিধাভোগী অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা' কারাগার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি নষ্টের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
তার ভাষ্য, "১৫-১৬ বছরের অনিয়ম দুর্নীতিতে অভ্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়, কিন্তু তা চলমান রয়েছে।"