কেবল মায়ের জন্য পাত্র খোঁজা নয়, গণ্ডি ভাঙার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন অপূর্ব।
Published : 01 Aug 2022, 11:02 PM
বাবার মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে পরপর দুটি বছর। সন্তানদের ব্যস্ত জীবনে একাকিত্বের যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় ফেইসবুকে মায়ের জীবনসঙ্গী খুঁজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন ছেলে।
মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে এমন অভিনব বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ অপূর্ব। তিন দিনে পাত্র হিসাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন প্রায় একশ জন।
সোমবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে ওই পোস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য, ফেইসবুক এবং তার বাইরেও সাড়া পাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন অপূর্ব।
শনিবার ‘বিসিসিবি মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপে মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে অপূর্ব লিখেছিলেন, “বাবা মারা গেছে তাই আম্মুর জন্য পাত্র খুঁজছি।”
যেমন পাত্র চান তার বিবরণ দিয়ে তিনি লেখেন, “আম্মুর সাথে মানানসই পাত্র খুঁজছি। অবশ্যই ঢাকার আশেপাশে হলে ভালো। ব্যবসায়ী বা জব হোল্ডার; শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও সমস্যা নেই।
“নামাজি হতে হবে মাস্ট। মানে একদম সাদা-মাটা একজন, যে আম্মুর জীবনের বাকি চলার পথগুলোর সঙ্গী হবে। ৪২-৫০ বয়স হলে ভালো হয়।”
পাত্রী হিসাবে মা ডলি আক্তারের বিবরণও ওই পোস্টে দিয়েছেন অপূর্ব। ৪২ বছর বয়সী ডলি আক্তার পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। উচ্চতা ৫ ফুটের বেশি।
মায়ের সম্মতি নিয়ে পোস্ট দেওয়ার কথা তুলে ধরে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সবার জীবনে একান্তভাবে পাওয়ার জন্য কারও না কারও প্রয়োজন। কিছু প্রয়োজন সেটা সন্তানেরাও মেটাতে পারে না।
“এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসাবে প্রয়োজন, যার কাঁধে মাথা রেখে মনের কথাগুলো বলা যাবে। আমার মা আমার কাঁধে মাথা রেখেও অনেক কথা বলতে পারেন, কিন্তু সেটাতো আর জীবনসঙ্গীকে বলার মতো করে হবে না।”
পোস্ট দেওয়ার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য ছিল জানিয়ে অপূর্ব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমত পার্টনার খোঁজার উদ্দেশ্য ছিল। দ্বিতীয়ত, আমরা যে এ ধরনের ব্যাপার নিয়ে একটা গণ্ডির মধ্যে পড়ে আছি, সেটা থেকে বের হওয়া যে সম্ভব, তা তুলে ধরতে চেয়েছি।”
ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর সোমবার পর্যন্ত প্রায় একশ পাত্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অপূর্ব বলেন, “অনেকে টেক্সট করেছে, অনেক সিভি পাঠিয়েছে। বেশির ভাগকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। কয়েকজনকে অবজারভেশনে রাখছি, আর যাচাই-বাছাই করছি। বিষয়টা নিয়ে খুব ভেবেচিন্তে আগাতে চাচ্ছি।”
নিজেদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে ওই পোস্টে অপূর্ব লিখেছেন, “পারিবারিকভাবেই বিয়ে দিতে ইচ্ছুক।”
অপূর্বরা দুই ভাই। বড় ভাই ইমরান হোসেনও ব্যবসা করেন। বিবাহিত ইমরানের এক সন্তান রয়েছে। ৮৫ বছর বয়সে অপূর্ব-ইমরানের বাবা ঈয়াদ আলী দুই বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অপূর্ব বলেন, ‘জি অ্যান্ড টেক’ নামে অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা রয়েছে তার। নবম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি।
‘বিসিসিবি মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’ নামে যে গ্রুপে অপূর্ব পোস্ট দিয়েছেন, সেখানে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার সদস্য রয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই পোস্টের নিচে ছয়শর বেশি সদস্য মন্তব্য করেছেন।
সেখানে প্রায় সবাই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানালেও ফেইসবুকের অন্যান্য গ্রুপে এটা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য আসায় নিজের মনোকষ্টের কথা জানিয়েছেন অপূর্ব।
তিনি বলেন, “আমাদের যেমন স্বভাব- এ ধরনের পোস্ট দিলে নেগেটিভ করে ফেলি। কিন্তু আমার পোস্টের নিচে এখন পর্যন্ত মাত্র ২-৩টা নেগেটিভ কমেন্ট পেয়েছি।
“কিন্তু এখান থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে অন্য যেসব জায়গায় পোস্ট করা হয়েছে, সেখানে অনেকের নেতিবাচক কমেন্ট আমি দেখেছি।”
অপূর্বের পোস্টে মন্তব্যের ঘরে কয়েকজন পাত্রের সন্ধান দিয়েছেন। কেউ কেউ সন্ধান দেওয়ার জন্য অপূর্বর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছেন।
মন্তব্যের ঘরে কেউ কেউ লিখেছেন, ওই গ্রুপে পাত্র-পাত্রী চেয়ে বহু ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেখলেও মায়ের জন্য পাত্র চাওয়ার এমন পোস্ট তারা আগে কখনো দেখেননি।
মরিয়ম আক্তার প্রীতি নামে একজন লিখেছেন, “সমাজ কী বলবে তা দেখার দরকার নেই। কজ আমাদের সন্তানদের যেমন নিজের জীবনের ডিসিশন নেওয়ার অধিকার আছে, ঠিক তেমনি মা-বাবারও আছে।
“অনেক পরিবারের মানুষ এইটা একসেপ্ট করতে পারে না কিন্তু এইটা ভুল। জীবনে চলার পথে সঙ্গী লাগে।”
তাসকিয়া নওরীন মোমি নামে গ্রুপের এক সদস্য তার মামীকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্যের ঘরে বলেন, “মামী আমি যদি আমার বাপকে দু'বার বিয়ে করাতে পারি। তাহলে ছেলে হয়ে কেন পারবে না।”
জবাবে মোমির মামী নওহার তাসনীম লেখেন, “সবাইতো এরকম হয় না। বিশেষ করে মাকে বিয়ে দেওয়া রেয়ার। বাবাকে করানো জায়েজ এই সমাজে, বাট মাকে এই ছেলেটা এই বয়সেই বিয়ে করাতে যাচ্ছে, মানে এটা দেখা বা শোনা যায় না।”