একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অপারেশন ‘কিলো ফ্লাইটের’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুলতান মাহমুদ।
Published : 15 Aug 2023, 11:28 AM
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন কিলো ফ্লাইটের অন্যতম সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম মারা গেছেন।
ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে রাজীব মাহমুদ জানান।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সুলতান মাহমুদের মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিম ঘরে রাখা রয়েছে। মঙ্গলবার পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার জানাজা ও দাফন হবে।
সুলতান মাহমুদের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সুলতান মাহমুদ উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তিনি সামলেছেন।
সুলতান মাহমুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, “সুলতান মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই নম্বর সেক্টর ও পরবর্তীতে সেক্টর এক-এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কিলো ফ্লাইট অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।"
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হাতেগোনা কিছু সরঞ্জাম আর রসদ নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অপারেশন ‘কিলো ফ্লাইটের’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুলতান মাহমুদ। তার জন্ম ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুনজরা গ্রামে ১৯৪৪ সালে।
স্কুল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে কমিশন পান। ১৯৭১ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে করাচির মৌরীপুর বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে মে মাসে পালিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়ে ঢাকায় পৌঁছান সুলতান মাহমুদ। পরে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ভারতে পৌঁছান। যুদ্ধে তিনি দুই নম্বর সেক্টর এবং পরে এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুদ্ধ চলাকালীন ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নাগাল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত বিমান ঘাঁটিতে একটি এলয়েড থ্রি হেলিকপ্টার, একটি অটার ও একটি ডিসি থ্রি ডকোডা উড়োজাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর। লোকবল বলতে ছিলেন ১০ জন পাইলট এবং ৬৭ জন টেকনিশিয়ান। এই বাহিনীর সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন ‘কিলো ফ্লাইট’।
‘কিলো ফ্লাইট’ এর বিমানগুলো ছিল সেকেলে। সেগুলো দিয়েই এই ছোট্ট বাহিনী ১০দিনে ৪০টির মত কমব্যাট মিশন সম্পন্ন করেছিল। একাত্তরের ৩ ডিসেম্বর রাতে ভারতের তেলিয়ামুরা থেকে এলুয়েট হেলিকপ্টার উড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ফুয়েল ডিপোতে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছিল সফলভাবে। গৌরবময় এই মিশনে সুলতান মাহমুদের সঙ্গে ছিলেন ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম।
সুলতান মাহমুদের চৌকস অধিনায়কত্বে ‘কিলো ফ্লাইট’ এর মিশনে মুক্তিযুদ্ধের গতি ও বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। দেশাত্মবোধ আর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই স্কোয়াড্রন লিডারকে পরে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ২০১৮ সালে সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।