দুই দফায় ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকি পাঁচ খুনি এখনও রয়েছে অধরা।
Published : 14 Aug 2023, 07:09 PM
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের তথ্য দিলে পুরস্কার দেবে সরকার বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
জাতীয় শোক দিবসের আগের দিন সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পলাতক খুনিদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমি সব দেশবাসীকে বলব, যাদের কোনো ঠিকানা আমরা পাই নাই, এদের তথ্য দিয়ে আপনি পুরস্কৃত হবেন। আমরা পুরস্কার ঘোষণা করছি, যেই এদের তথ্য দিতে পারবে, সরকার তাদের পুরস্কার দেবে।”
দুই দফায় ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকি পাঁচ খুনি এখনও রয়েছে অধরা।
তারা হলেন- আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী।
এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ বারবার দাবি জানালেও তাদের ফেরত পাঠানো হয়নি।
বাকি তিনজনের কোনো খোঁজ এখন পর্যন্ত পায়নি সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দারা। মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন বলে ২০২২ সালে পত্রিকায় খবর এলেও তার ‘সত্যতা নিশ্চিত’ হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
একদল সেনা কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই মামলায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
আপিলের রায়ে এদের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে।
বাকি ১১ জনের মধ্যে কারাবন্দি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়।
এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি এই পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক থেকে যান।
এর প্রায় ১০ বছর পর ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ছয়জনের একজন ৭২ বছর বয়সী আব্দুল মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় সরকার।
তখন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, মাজেদ এতদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়েছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দেশে ফেরেন।
পলাতক মাজেদের আপিলের সুযোগ ছিল না। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষার চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তা নাকচ হওয়ার পর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে দুই খুনিকে ফেরত পাঠাতে বহুবার আলাপ হলেও তারা বিভিন্ন রকম অজুহাতে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পলাতক খুনিদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
খুনি রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর খবর জানলেও বাকিদের বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওদের জন্য আমরা অনেক চিঠিপত্র লিখেছি। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আমরা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা সবসময় আমাদেরকে বলে যে, ইস্যুটা তাদের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আছে।
“অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস প্রায় দুবছর আগে চাইল যে, আমাদের দেশে যে কেইসটা হয়েছে, কেইসটা কীভাবে হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য। আমরা সেসব তথ্য তাদেরকে দিয়েছি। এখন আমরা যখন স্টেট ডিপার্টমেন্টে অ্যাপ্রোচ করি, তারা বলে যে, এটা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আছে। আর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই।”
নূর চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে কানাডা সরকার কিছু বলেনি জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সেজন্য আমরা কানাডায় কেইসও করেছি। কেইসে জাজ রায় দিয়েছেন, তার অবস্থান বলতে কানাডা সরকারের কোনো আপত্তি থাকা উচিত না। তবুও কানাডীয় সরকার এই তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছায় নাই।”