কালী পূজা হচ্ছে- শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয় এর মূল কথা।
Published : 12 Nov 2023, 09:43 PM
দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় সহস্র প্রদীপ জ্বেলে অশুভের বিনাশ আর শুভশক্তির জয়লাভের প্রত্যাশা নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্যামা পূজা, যা বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে কালী পূজা নামেও পরিচিত।
সাধারণত কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে শ্যামা পূজা বা কালী পূজা হয়। সে অনুযায়ী রোববার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। রাত ৮টার পর শুরু হয় মূল পূজা, যা চলবে ভোররাত পর্যন্ত।
এ বছর দেশে কতগুলো মন্দির-মণ্ডপে কালী পূজা হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট হিসাব জানাতে পারেননি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "কালী পূজা তো অনেকে বাড়িতেও ব্যক্তিগতভাবে করেন, আবার মন্দির-মণ্ডপেও হয়। ফলে কতগুলো জায়গায় পূজা হচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান বলা সম্ভব নয়।"
হিন্দু পূরাণ মতে, দেবী দূর্গার একটি শক্তির প্রকাশ কালী রূপে। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে- শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয় এর মূল কথা। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুন্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কালী পূজা হল শ্যামা মায়ের পূজা। মায়ের তো দশরূপ। একেক জায়গায় একেক রূপে পূজা করা হয়। আমাদের এখানে দক্ষিণাকালী রূপে মায়ের পূজা করা হচ্ছে।"
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী- কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এ কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজাও অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্গা পূজার মত কালী পূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালী পূজা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা হয়। তবে গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত দেবীর পূজা হয় অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে।
পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বলেন, রাত ৮টার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় পূজা হয়, শেষ হতে হতে ভোর হয়ে যায়। পরদিন কেউ কেউ প্রতীমা বিসর্জন করেন। কেউ বা আর দু'দিন পর বিসর্জন দেন।
কালী পূজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। এ আচারই দীপাবলী।
বিকেল থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ ঢাকার কয়েকটি মন্দিরে দেখা যায় পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন পুরোহিতেরা। পূণ্যার্থিরাও আসতে শুরু করেন বিকেল থেকেই, সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে ভিড়।
ভক্তরা এসে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করে শুভ প্রত্যাশার কথা জানান কালী মায়ের কাছে। ধানমন্ডি থেকে আসা দিপালী চক্রবর্তী বলেন, "পূজায় প্রার্থনা করেছি যেন সকলের মঙ্গল হয়, মানুষের মধ্যে যেন হানাহানি বন্ধ হয়। পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে।"
সন্ধ্যার পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ।
এবার রাজনৈতিক অবরোধ কর্মসূচির মাঝেই পূজা হচ্ছে, ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দেখা যায় সতর্ক অবস্থায়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়ে।
সারা দেশেই শান্তিপূর্ণভাবে পূজা হচ্ছে জানিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, "আমরা তো রাজনৈতিক দলগুলোকে আহবান জানিয়েছিলাম, পূজার দিন যেন অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তারা তো সেই আহবান শোনেননি। ফলে এক ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থা তো রয়েছেই। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দেশেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা চলছে। আশা করি ভালোমতই ভক্তরা পূজা উদযাপন করবেন।"
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, সবুজবাগ থানাধীন শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, পুরান ঢাকার রাধাগোবিন্দ জিঁও ঠাকুর মন্দির, পোস্তাগোলা মহাশ্মশান, তাঁতী বাজার, শাখারী বাজার, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন মণ্ডপ ও মন্দির এবং বাড়িতে ব্যক্তিভাবে কালী পূজা হচ্ছে।