মিজান সয়াবিন তেল গরম করে এনে ঘুমন্ত রূপার শরীরে ঢেলে দেন। দগ্ধ রূপা পরে হাসপাতালে মারা যান।
Published : 13 Apr 2025, 12:24 PM
দুই বছর আগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে যৌতুকের জন্য গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আসামি মিজান সরদারকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
রায় ঘোষণার আগে মিজান সরদারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর এরশাদ আলম (জর্জ)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মিজান সরদারের সঙ্গে দশ বছর আগে বিয়ে হয় মিম আক্তার রূপার। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। মিজান বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য রূপাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন।
রূপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মিজানকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে দেন, সাত লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকানও করে দেন। মিজান আরও যৌতুক দাবি করলে রূপা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মিজান এরপর রূপার ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। তারপরও দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে তা সহ্য করে যান রূপা।
২০২৩ সালের ৬ মে রাতে মিজান কদমতলীর খালপাড় এলাকার বাসায় রূপাকে যৌতুকের জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে রূপা দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩ টার দিকে মিজান সয়াবিন তেল গরম করে এনে রূপার শরীরে ঢেলে দেন। তাতে তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তার দুই সন্তানও কিছুটা দগ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রূপা।
এ ঘটনায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে রূপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ৯ মে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। রূপা মারা যাওয়ার পর মামলাটি যৌতুকের জন্য হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
মামলাটি তদন্ত করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এসআই শরজিৎ কুমার ঘোষ ওই বছরের ৩১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার বিচারে চার্জশিটভুক্ত ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য শুনে আদালত রোববার আসামি মিজান সরদারকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।