বাকি তিন আসামি হলেন আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মঈনউদ্দীন মোনেম, ফারহানা মোনেম ও পদ্মা ব্যাংকের সাব্বির মোহাম্মদ সায়েম।
Published : 13 Apr 2025, 04:42 PM
পদ্মা ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ‘টাইম লোন’ নিয়ে তা অপব্যবহার ও আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) এ মামলা হওয়ার তথ্য দিয়েছেন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
মামলায় বাদী হয়েছেন কমিশনের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ রাকিব উদ্দিন মিনহাজ।
মামলার বাকি তিন আসামি হলেন— ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মঈনউদ্দীন মোনেম, পরিচালক ফারহানা মোনেম এবং পদ্মা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান করপোরেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সাব্বির মোহাম্মদ সায়েম।
এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের নামে ছয় মাসের জন্য পাঁচ কোটি টাকার একটি ‘টাইম লোন’ অনুমোদন করা হয়। কিন্তু আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঋণের শর্ত ভঙ্গ করেন। তারা এ অর্থ ব্যবসার মূলধন হিসেবে ব্যবহার না করে অন্য ঋণের দায় মেটাতে ব্যয় করেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯, ৪২০ ও ৫১১ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অনুসন্ধানের বরাতে দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুল মোনেম লিমিটেড ২০২২ সালের ২৯ মার্চ পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় একটি শর্ট নোটিশে ডিপোজিট (এসএনডি) হিসাব খোলে। যদিও ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ২৫ কোটি টাকার কম্পোজিট ঋণের আবেদন করেন।
২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৮৪তম সভায় এ ঋণ অনুমোদন পায়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ২০ কোটি টাকার এলসি ও ৫ কোটি টাকার টাইম লোনসহ ২৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর আরও একবার ৫ কোটি টাকার ‘টাইম লোনের’ (ছয় মাসের জন্য) আবেদন হয়। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংকের ৫৫তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় সে ঋণও পেয়ে যায় তারা। ঋণ বিতরণ হয় ২৮ ডিসেম্বর।
শর্ত অনুযায়ী, ঋণের অর্থ দুধ গুঁড়া, কাঁচামাল, প্যাকেজিং উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কেনার মাধ্যমে আইসক্রিম ইউনিট চালু রাখতে ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ঋণের অন্য খাতে স্থানান্তর করে অন্য ঋণের দায় পরিশোধে ব্যবহার করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ছিল ২০২৪ সালের জুন, তবে গ্রাহক তা সময়মতো পরিশোধ করেননি এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।
দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনটি সন্দেহজনক নগদ লেনদেনের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করে তা সমন্বয় করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু না হলে এ অর্থ আত্মসাৎ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এছাড়া ঋণ অনুমোদনের সময় পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আসামি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়, তিনি একই সঙ্গে ঋণদাতা ও ঋণের সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঋণের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষমতা অপব্যবহার করেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত তিন মেয়াদে আর্থিক খাতের অনিয়মে বারবার নাফিজ সরাফাতের নাম এলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী অনেক ব্যবসায়ীর মত নাফিজ সরাফাতের বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে অর্থপাচার প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।