“বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তায়, স্থিতিশীল, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে ভারত সবসময় প্রস্তুত থাকবে।”
Published : 15 Jan 2024, 07:33 PM
গত এক দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে ‘অভাবনীয় উন্নতি’ হয়েছে, শেখ হাসিনার নতুন সরকারের সময়ে তা আরো এগিয়ে যাবে বলে আশা করছেন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা।
সোমবার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন ভারতীয় দূত।
তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী যে, বর্তমান সরকারের নতুন মেয়াদে আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আগের চেয়ে বেশি গতি পাবে। আমাদের উন্নয়ন অংশীদারত্ব যাতে আমাদের জাতীয় উন্নয়নে আরও বিস্তৃতভাবে অবদান রাখতে পারে, তা করতে আমরা সক্ষম হব।”
আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, এখনও আছে।
“২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ভারতবর্ষ আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনকেও বিতর্কিত করা, সেই নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্নের উপস্থাপন করা হয়েছিল। ভারতবর্ষ আমাদের পাশে ছিল এবং এবারও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, আপনারাই জানেন, ভারতের অবস্থানটা কী ছিল, আছে।”
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকারে থাকার এই সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে দুই পক্ষ দাবি করে আসছে।
প্রণয় ভার্মা বলেন, “আমরা সবসময় বলে আসছি, বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তায়, স্থিতিশীল, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে ভারত সবসময় প্রস্তুত থাকবে। আর সেটা হবে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক দ্বারা পরিচালিত এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অভিন্ন ত্যাগ দ্বারা অনুপ্রাণিত।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের বহুমুখী সম্পর্কের পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে প্রণয় ভার্মা বলেন, “কীভাবে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে পারি এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
আলাদাভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও তার আলোচনা হয়েছে।
“নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। পেট্রোল বোমা মেরে একটি পুরো পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেটি স্পষ্টতই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, মানুষকে ভয় লাগানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছিল।
“এ বিষয়গুলি আলোচনা হয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে দেশে মানুষের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনার মধ্যে এই সমস্ত কিছু ঢাকা পড়ে গেছে, দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘ভালো ও সুন্দর’ বলেছেন দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, “গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভারত আমাদের পাশে ছিল, আছে- এ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিজের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে দিল্লী যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান হাছান মাহমুদ। তবে প্রথম বহুপক্ষীয় সফরে বুধবার উগান্ডার উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাকে দিল্লী সফরের ব্যাপারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা টাইমটা দেখছি আমার জন্য এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য উপযোগী হয়, সেটি নিয়ে আমি কাজ করছি।”
ভারতকে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশী’ হিসেবে বর্ণনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। দু'দেশের মানুষের মাঝে যোগাযোগ (কানেক্টিভিটি) ও বাণিজ্যের প্রসারে আন্তঃদেশীয় রেল ও সড়ক সংযোগ স্থাপনে চলমান কাজ দ্রুত সমাপ্তির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
“সেইসাথে আন্তর্জাতিক মুদ্রার উপর নির্ভরতা কমাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা, অর্থাৎ বাংলাদেশের টাকা ও ভারতের রুপি ব্যবহারের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এতে করে উভয় দেশই উপকৃত হবে।”