বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এই বৈঠক হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক টুইটে জানান হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাতীয় পার্টির পক্ষে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বৈঠকে ছিলেন।
দূতাবাসের টুইটে বলা হয়, “আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ভিসা সীমিত করার এই নতুন ভিসা নীতি সবার জন্য প্রযোজ্য।”
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত দেশের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষিত ভিসা নীতি কারণ ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে সেলিম মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিমালা দিয়েছে, তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।
“ভিসা রেস্ট্রিকশনে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। কারণ, আমরাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করেছি,গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করেছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন করেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।”
বৈঠকে পিটার হাসকে কী বলেছেন, এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “আমি দলের পক্ষ থেকে একটা মতামত দিয়েছি, সেটা আপনাকে বলছি।”
দেড় ঘণ্টা আলোচনার পর সেখান থেকে বেরিয়ে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভোট রিগিং হচ্ছে…. এটা বন্ধ করার জন্য আমরা স্বাগত জানাই তাদের পদক্ষেপকে।
“এটা তাদের (সরকার) জন্য বড় মেসেজ। এই মেসেজ না নিয়ে আবার যদি বাংলাদেশে ভোট চুরির প্রক্রিয়ায় তারা অব্যাহতভাবে কাজ করতে থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের চিন্তা করা দরকার।”
সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা মজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, “মার্কিন সরকার বাংলাদেশের যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে চেয়েছে। প্রতিটি দলই তাদের মতামত দিয়েছে। আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র একটা ফেয়ার ইলেকশন চায়। নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।”
এদিকে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তিনি সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ভিসা নীতি নিয়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করেন।
“এটা প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং যারা এই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্র সব সময়েই গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।”
আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।”
এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে: ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।