তবে এ আলোচনার ফলাফল নিয়ে আপতত সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
Published : 29 Jul 2024, 08:15 PM
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তিতে আপত্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তবে এ আলোচনার ফলাফল নিয়ে আপতত সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিকাল ৪টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই বৈঠক শুরু হয়। শুরুতে সাংবাদিকদেরকে বৈঠকের ছবি তোলার জন্য ডাকা হলেও শিক্ষামন্ত্রী তখন জানিয়ে দেন, এ নিয়ে আপাতত কোনো ব্রিফ করা হবে না।
তিনি বলেন, “যারা ফুটেজ নিয়ে নিয়েছেন, যেহেতু আজকে এই বিষয় নিয়ে কোনো ব্রিফিং হবে না… আমরা একটা ফলপ্রসূ সমাপ্তি প্রত্যাশা করছি। এখানে আলোচনায় বসে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এবং সেটা আজকে আর হবে না। তাই সাংবাদিকদের দয়া করে অনুরোধ জানাব…।“
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দেবেন, তাদের প্রত্যয় পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা এ নিয়ে আন্দোলনে নামলে বিষয়টি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এরপরেও শিক্ষকদের একটি অংশ কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেনশন স্কিমে কিছু সংশোধন আনার পরিকল্পনার কথা বলেছেন, যদিও সেই ভাবনার বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি।
এরই মধ্যে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন চরমে উঠলে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
সোমবারের সভার সূচনা বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাসহ সারাদেশ যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন। শিক্ষার্থীদেরকে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে উদ্ধার করে তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেনে।
“আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিক্রিয়াশীল উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী আজকে শিক্ষার্থীদের লাশের উপর ও ব্যাপক আত্মত্যাগের উপরে ক্ষমতা দখলের হীন ও নৃশংস ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল, সেটা তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই প্রেক্ষিতে আজকে সম্মানিত শিক্ষক মণ্ডলী মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। আজকে শিক্ষকদের সাথে বৈঠক হলেও এ নিয়ে কোনো বিফ্রিং হবে না।”
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, “দেশ আজ চরম সংকটে উপস্থিত। এরপরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক, শিক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাদেরকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। দেশ, জাতীয় স্বার্থ সবার আগে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব করতে হবে। এই সংকটের মধ্যে আমরা সবাই ইউনাইটেডলি দাঁড়াব। যত অপশক্তি থাকুক না কেন, দেশ বিদেশি যত ষড়যন্ত্র হোক না কেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আর আমদের যে সমস্যা সেটা আমরা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে সমাপ্তি করব।”
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান, ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক অব্দুর রহিম, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন ছিলেন বৈঠকে।
কেন আন্দোলন
চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে যারা সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন, তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আসবেন। তবে তাদের স্কিম কেমন হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
বর্তমানে চারটি পেনশন স্কিম আছে, যেখানে মাসে ১০০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমানোর সুযোগ আছে। কারও বছর ৬০ হওয়ার পর তিনি আজীবন পেনশন পাবেন।
হতদরিদ্রদের যে এক হাজার টাকার স্কিম আছে, সেখানে ৫০০ টাকা সরকার দেবে। বাকি তিনটি স্কিমের পুরো টাকা পেনশন গ্রহণে আগ্রহীরা জমা করবেন।
প্রত্যয় স্কিমে কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ অথবা ৫ হাজার টাকার নিচে যেটা কম, সেটা জমা করবেন, সমপরিমাণ টাকা দেবে প্রতিষ্ঠান।
তবে আন্দোলনে গিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক’।
যুক্তি হিসেবে তারা বলছে, এখন যে আনুতোষিক পাওয়া যায়, প্রত্যয় স্কিমে তা নেই। চাকরিজীবী এবং তার নমিনি এখন আজীবন পেনশন পান, প্রত্যয়ে যুক্ত হলে সেটাও কমবে।
বর্তমান নিয়মে পেনশনাররা মাসে চিকিৎসা ভাতা, দুটো উৎসব ভাতা পান, একটি বৈশাখী ভাতা পান, প্রত্যয়ে সে ব্যবস্থা নেই। এখনকার মত ইনক্রিমেন্টও নেই।
বর্তমানে দেশে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির মত প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) এর আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পান, পেনশন পান না।
পুরনো খবর
শিক্ষক আন্দোলনে পেনশনের 'প্রত্যয়' এক বছর পেছাল
পেনশন স্কিমে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর, তবে অপেক্ষা