“আন্দোলন যখন তারা চালাবেই, তখন চালাতে থাক, চালাতে চালাতে যখন টায়ার্ড হবে, তখন বলব। তার আগে বলার দরকারটা কি?”
Published : 14 Jul 2024, 08:47 PM
পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দুই-একটা বক্তব্যের সঙ্গে একমত হলেও এটা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষকদের দাবির আলোকে কিছু পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তার জন্য আন্দোলন থামার অপেক্ষায় থাকতে চাইছেন তিনি।
চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে রোববার গণভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আর কয়েকটা বিষয় এগুলি আমি দেখে রেখেছি অলরেডি, এটা মার্ক করে রেখে দিয়েছি, সেগুলো আমরা দিব।
“আন্দোলন যখন তারা চালাবেই, তখন চালাতে থাক, চালাতে চালাতে যখন টায়ার্ড হবে, তখন বলব। তার আগে বলার দরকারটা কি?”
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন স্কিম ঘোষণা করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ; এসব প্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া সবার এই স্কিমে চলে যাওয়ার কথা।
এর মধ্যে ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর নিয়োগ পাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদেরকেও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেওয়ার ঘোষণা বাজেট বক্তৃতায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
‘প্রত্যয়’ স্কিমের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন; গত ১ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে তারা।
আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক’। কারণ বর্তমানে পেনশনের জন্য তাদের বেতন থেকে অর্থ কাটা না হলেও নতুন নিয়মে ১০% কাটা হবে।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে সম্প্রতি অভয় দিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
কর্মবিরতি চলার মধ্যে শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠককে ‘ফলপ্রসু’ বললেও পরদিন রোববার এসে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মবিরতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “শিক্ষকদের দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তোলা হবে। ২০২৫ সালের ১ জুলাই শিক্ষকদের পেনশন স্কিমের কার্যকারিতা শুরু হবে। ইতোপূর্বে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সনের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়।
২০২৫ সাল থেকে কার্যকরের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা তুলে ধরে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের অনেকগুলো ভুল ধারণা, এখন এত বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। পেনশন নিয়ে তাদের ধারণাটা এত বিভ্রান্তিকর, যে তারা…
“এর মধ্যে দুয়েকটা জিনিস আছে, ২৪ না ২৫, ওটা ঠিক করে দেওয়া যাবে, এটা কোনো ব্যাপার না।”
সংবাদ সম্মেলনে টেবিলের উপর কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, “তাদের যে দাবিদাওয়া ছিল, সেটা তারা পাঠিয়েছে। সেখানে বেশকিছু ভ্রান্ত ধারণাও তাদের আছে। ইতোমধ্যে দুটো পেপার আমার পড়া। এখন আর এর মধ্যে এটা তুলতে চাই না। আমার এখানে লেখাও আছে, আমি নিয়েও আসছি। এখন আমি বলব না।”
পেনশন ফান্ড নিয়ে শিক্ষকদের ‘ভুল ধারণা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের একটা ভুল ধারণা, এখানে বোধহয় পেনশন ফান্ড আছে। পেনশন ফান্ড বলে কিছু নাই।
“পেনশনটা দেওয়া হচ্ছে, যারা আমাদের একেবারে ট্যাক্সপেয়ার তাদের টাকা থেকেই দেওয়া হয়, এখানে ফান্ড বলে কিচ্ছু নাই।”
প্রত্যয় স্ক্রিম: কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের
শিক্ষকদের দাবি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে, আন্দোলন থেকে সরার আহ্বান
চাকরিজীবী ও পরিবারের সবার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সর্বজনীন পেনশনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যেটা করতে চাচ্ছি, সর্বজনীন পেনশন স্কিম করে দিয়েছি সকলের জন্য।
“এই যে, সাংবাদিকরা আজকে কারও চাকরি না থাকলে কালকে তার কিছু করার নাই। কোথায় যাবে তারা? তার পরিবারটা কোথায় যাবে? সেইক্ষেত্রে এটা এমনভাবে করা, আপনারা সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং আপনার পরিবারও হতে পারে।”