Published : 01 Jul 2023, 09:24 AM
বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভীষিকাময় হোলি আর্টিজান হামলার দিনটি।
সাত বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে একদল জঙ্গির নৃশংসতার ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ওই ঘটনার পর জঙ্গি দমনে শুরু হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান।
রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি আজো সবার কাছে আলোচিত এক স্থান। এই বাড়িতেই ছিল হোলি আর্টিজান বেকারি। সেখানেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় বাংলাদেশের পাঁচ তরুণ।
নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিদেশিদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত এই রেস্তোরাঁকে বেছে নিয়ে রমজান মাসের শেষের দিকে উগ্রবাদী সেই তরুণের দলটি গুলি চালিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, একজন ভারতীয়, দুজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক ছিলেন। এর বাইরে হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
পরদিন ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যু হলে হোলি আর্টিজান নিয়ে সংকটের অবসান হয়।
গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় এই ঘটনা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও বড় পরিসরে সেই খবর প্রকাশ করে।
ওই ঘটনার বিচার চলে প্রায় সাড়ে তিন বছর। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজনের ফাঁসির রায় দেয়।
দণ্ডিত সাতজন হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। তারা সবাই কারাগারে আছেন।
আর অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয় আদালত।
এ মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং আপিল বর্তমানে হাই কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশে উগ্রবাদীরা সংগঠিত হতে শুরু করে গত শতকের শেষভাগে। নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবির তৎপরতা আলোচনায় আসে চলতি শতকের শুরু থেকেই।
তাদের দমন করতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিশেষ উইং খোলে, গঠন করা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। কিন্তু হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার ব্যাপারে এসব বিশেষ ইউনিটের কাছে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ঘটনার পর তারা জঙ্গি দমনে বিশ্বের কাছে ‘মডেল’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। এখন তারা জঙ্গি দমনে শতভাগ সফল।
সাবেক আইজিপি শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই দিনটি ছিল আমাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। যারা হোলি অর্টিজানে হামলা চালিয়েছিল, তারা এদেশে আইএস আছে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশলের কারণে তারা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।”
সব পেশাজীবী শ্রেণিকে সম্পৃক্ত করায় উগ্রবাদ দমনে সফলতা আসে মন্তব্য করে তিনি জানান, বেইজিংয়ে ইন্টারপোলের এক কনফারেন্সে তার কাছে জঙ্গি দমনে সফল অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর অফিসের জন্য জঙ্গি দমনে অভিজ্ঞ দুইজন অফিসারও চেয়েছিল।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামানও জঙ্গি দমনে ‘শতভাগ সফলতার’ দাবি করলেন।
এই কর্মকর্তার দাবি, যেখানেই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে, সেখানেই তাদের দমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হলি আর্টিজান মামলায় ৭ জঙ্গির ফাঁসির রায়, একজন খালাস
গুলশান হামলা: ১২ ঘণ্টার বিভীষিকা
গুলশান হামলা: প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাদের বর্ণনায় সেই রাত
“আমাদের তৎপরতার কারণে হোলি আর্টিজানের পর আর কোথাও তারা বড় ধরনের কোনো হামলা চালাতে পারেনি; করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের সাইবার ইউনিট খুবই স্ট্রং, সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ এসব ইউনিটের পাশাপাশি জঙ্গি দমনে এলিট ফোর্স র্যাবও তৎপর ছিল। হোলি আর্টিজান ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় র্যাবের অভিযানে হোলি আর্টিজানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী সারোয়ার জাহানসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।
এই বাহিনীর এক বার্তায় জানানো হয়, তারা এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে গতবছর ১৭০ জনকে এবং চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জঙ্গি দমনে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, ঢাকার কল্যাণপুরে জাহাজ বাড়ির অভিযানগুলো সবচেয়ে আলোচিত ছিল।
সিটিটিসি, র্যাব এবং পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি দমনে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করায় সফলতা পাওয়া গেছে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে এখনও কাজ চলছে এবং যারা জড়িয়ে গেছেন এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।