বিএম ডিপোর আগুনে বদলে যাওয়া জীবনে কৃত্রিম অঙ্গ কিছুটা হলেও গতি আনতে পারবে বলে আশা করছেন ভুক্তভোগীরা।
Published : 03 Nov 2022, 03:46 PM
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় হাত হারানো গাড়িচালক মারুফ হোসেন বেঁচে থাকার আশা ফিরে পেয়েছেন কৃত্রিম হাত পেয়ে।
ওই দুর্ঘটনার পর পাঁচটি মাস ভয়াবহ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নোয়াখালী সদরের এই বাসিন্দা বলেন, “ঢাকা থেকে মালামাল নিয়ে গিয়ে ডিপোতে খালাসের অপেক্ষায় ছিলাম। তখনই আগুন লাগে৷ আমাদের অনেকের হাত পা চলে গেছে।
“হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হলে কান্না করতাম কেন একেবারে মরে যাইনি। এখানে আসার পর আমাকে হাত দিয়েছে। এই হাত দিয়ে আমি এখন খেতে পারব, নিজের অনেক কাজ করতে পারব।"
মারুফের মত অঙ্গ হারানো আরও আটজনকে কৃত্রিম অঙ্গ দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ব্র্যাক লিম্ব অ্যান্ড ব্রেস সেন্টারে (বিএলবিসি) এক অনুষ্ঠানে তাদের এই সহায়তা করা হয়।
নোয়াখালীর মারুফ হোসাইন (২৪), চট্টগ্রামের মো. নুরুল আক্তার (৫০) এবং সোনারগাওঁয়ের হযরত আলী (৩৮) পেয়েছেন কৃত্রিম হাত। নোয়াখালীর হৃদয় হোসাইন (১৭) এবং চট্টগ্রামে মনির হোসাইন (২৪), মো. আব্দুস সামাদ পেয়েছে ও মো. তুহিন হোসাইনকে (২৬) কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মানিকগঞ্জের রবিন মিয়া (২২) ও চট্টগ্রামে মো. খালেদুর রহমানকে (৫৮) প্রেশার গার্মেন্টস দেওয়া হয়েছে চলাফেরায় সহায়তার জন্য।
দুর্ঘটনায় বদলে যাওয়া জীবনে এই কৃত্রিম অঙ্গ কিছুটা হলেও গতি আনতে পারবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ২৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে গত ৪ জুন।
অগ্নিকাণ্ডের পরে রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে, মৃত্যু হয় অর্ধশত মানুষের। দগ্ধ ও আহত হন দুই শতাধিক।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি (এইচএনপিপি) পরিচালক ডা. মোরশেদা চৌধুরী অনুষ্ঠানে জানান, সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর আহত ২৩ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
“নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের মধ্যে নয়জনকে চিহ্নিত করা হয়, যাদের কৃত্রিম অঙ্গ এবং প্রেশার গার্মেন্টস সহায়তা প্রয়োজন। দুই সপ্তাহ প্রশিক্ষণের পর আজ আমরা তাদের কাছে চূড়ান্তভাবে কৃত্রিম অঙ্গগুলো তুলে দিচ্ছি।"
আগুনের সেই রাতে উদ্ধারকাজে ডিপোতে গিয়ে পা হারান পুলিশ সদস্য মো. তুহিন হোসেন। তিনিও পেয়েছেন কৃত্রিম পা।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "ওইদিনের কথা ভাবলে এখনও আঁতকে উঠি। খুব কষ্ট লাগে। আমরা অন্যদের রক্ষা করতে গিয়েছিলাম। আমরা কিছু না করলে আরও মানুষ মারা যেত। এটা ভেবে নিজের পা গেলেও কিছুটা প্রশান্তি লাগে। তবে বিষণ্ন ছিলাম খুব। আজ ব্র্যাকের সহযোগিতায় পা পেলাম।“
সীতাকুণ্ড দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা কাজে শুরু থেকে জড়িত শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন।
তিনি বলেন, “আগে এমন হাত-পা লাগানোর কোনো সুযোগ ছিল না। এখন পারা যাচ্ছে। এই পা নিয়ে মানুষ ম্যারাথনেও যাচ্ছে।
“তাই আমি চাই, এই হাত-পা নিয়ে সবাই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক। ব্র্যাকের এই উদ্যোগে আমি খুবই আনন্দিত। ব্র্যাককে আহ্বান জানাই সরকারি সব হাসপাতালে এমন সেন্টার করার জন্য।"
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “এই দুর্ঘটনা সবার জন্য একটা ধাক্কা। কিন্তু এটি যেন আপনাদের পরের জীবনকে সংজ্ঞায়িত না করে। এই বাধা পেরিয়ে নতুন জীবনে আপনারা এগিয়ে যান এটাই আমরা চাই। মানুষ চাইলে সব বাধা
পেরিয়ে যেতে পারে। আমরা চাই আপনারা কর্মজীবনে ফিরে যাবেন।"
কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়া নয়জনের উদ্দেশে তিন বলেন, “আপনাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এই সহযোগিতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। তাই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে এসেছি। এটাকে ব্র্যাকের মহানুভবতা ভাববেন না। এটা দায়িত্ব।“
আগামী কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নেওয়া এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আহতদের কাউন্সিলিংয়েও ব্র্যাক পাশে থাকবে বলে জানান আসিফ সালেহ।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ব্র্যাক লিম্ব সেন্টারের প্রোগ্রাম হেড শাহিনুল হক রিপন।