“আমি রাশিয়ার দূতকে বলেছি, যেহেতু রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আছে; আমাদের যা অবস্থা, আমরা তো যুদ্ধ করতে যাব না কারও সাথে, পারবও না,” বলেন তৌহিদ হোসেন।
Published : 16 Aug 2024, 01:06 AM
ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা থেকে ‘নিরাপদ’ অবস্থান নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মনতিৎস্কির সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে শেষে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “আমি রাশিয়ার দূতকে বলেছি, যেহেতু রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আছে, আমাদের যা অবস্থা, আমরা তো যুদ্ধ করতে যাব না কারও সাথে, পারবও না।
“সেজন্য আমাদের দেখতে হবে, নিষেধাজ্ঞায়র মধ্য দিয়ে আমরা যতটুকু সহায়তা করতে পারি বা সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি, তার সর্বোচ্চটা করতে চাই।”
মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা সবসময় শ্রদ্ধাও করি, রুশ মানুষদের আমরা বন্ধু মনে করি। তবে, আমাদের নিরাপদ পথে চলতে হবে।”
তিনি বলেন, “তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিরাট সহায়তা দিয়েছে। ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত যদি তিনটা ভিটো না দিত আমাদের পক্ষে। কাজে সেই কৃতজ্ঞতা আমাদের আছে। তাদের একজন নাবিকের কবর আছে এখানে। সেটাও আমি বলেছি যে, তোমাদের অবদান নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই।”
বিলম্ব হতে পারে রূপপুরের নির্মাণকাজ
চলমান পরিস্থিতিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ প্রক্রিয়া বিলম্ব হতে পারে বলেও বৈঠক শেষে ধারণা দেন আলেকজান্দার মনতিৎস্কি।
তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছি, চলমান পরিস্থিতিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া অল্প দেরি হতে পারে। তবে এটা খুব বেশি সময় বিলম্ব হবে না।”
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ কাজ চালু রাখার আলোচনা বৈঠকে হওয়ার কথা তুলে ধরে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “রূপপুরের ব্যাপারে কথা হয়েছে, এটা চলমান রাখার বিষয়ে আমরা যেন সহায়তা করি।
“আমরা বলেছি, অবশ্যই, বড় বিনিয়োগ তো এরই মধ্যে হয়েই গেছে। এটার ফলাফল যদি আমরা না পাই, শেষ না হলে তো ফলাফল পাওয়া যাবে না। সেটার জন্য আমরা সহায়তা করব এটা বলেছি।”
‘উন্নয়ন-অগ্রগতিতে কাজ করে যেতে আগ্রহী জাপান’
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জাপান সরকার কাজ করে যেতে আগ্রহী হওয়ার কথা বলেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জাপান আশা করে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পাশাপাশি থেকে কাজ করতে আগ্রহী। কীভাবে এই সরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা শুধু অবকাঠামো খাতেই নয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ও পরিবেশ নিয়েও বাংলাদেশে কাজ করছি। আজকের বৈঠকে প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা সামনে আরও আলোচনা করব। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকতে চাই।”
বাংলাদেশে জাপানের মেট্রোরেলসহ অনেক বড় বড় প্রকল্প রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলোতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, “আমরা বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। সুতরাং প্রকল্পগুলো নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে পারছি না। আমরা বর্তমান সরকারের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখব।”
সাক্ষাৎ শেষে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রে জাপানের সাথেও একই রকম কথাবার্তা হয়েছে। জাপানের তো অনেক ঋণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে চলমানও আছে। বরং তারা আমাদের সহায়তা চেয়েছেন, যেগুলো প্রোগ্রাম চলমান আছে, এগুলোতে যেন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। বাকিগুলো ভবিষ্যতে পুনর্মূল্যায়ন তো হতেই পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান সম্বন্ধে বাংলাদেশে সাধারণত একটা ভালো মনোভাব আছে, সেটা তারাও জানে। তাদের এইড কোয়ালিটিও সবচেয়ে ভালোর একটি, টাকাটা আসলে সেটা আর যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে আসে এবং যায়। কিন্তু জাপানিদের সুবিধা হলো, যখন আসে থেকে যায় এখানে।”
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাপানের কাছে সহায়তা চাওয়ার কথা তুলে ধরে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বলেছি যে, তাদের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক খুব ভালো, সবসময়। কাজেই আপনারা সহায়তা করুন।
“উনারা অনেক প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। আমি বললাম, ছোটখাটো এক হাজার লোক নিয়ে যাওয়া, এগুলোতে কোনো কাজ হবে না। কারণ, নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে ফ্লাইটে উঠা পর্যন্ত এর মধ্যে এক হাজার বাচ্চা জন্ম দিয়ে গেল। কাজেই, যেটা করতে হবে, আসলে টেকসই একটা রিটার্নের (প্রত্যাবাসন) ব্যবস্থা করতে হবে।”
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা যথেষ্ট করেছি, আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে নিতে পারব না। পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে, এমনকি মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তওয়ালা দেশও অনেক আছে, দরকার হলে তারা নিক।”