প্রায় ৯ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
Published : 24 Jul 2024, 04:27 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতায় পুলিশের থানা, ফাঁড়িসহ ২৩৫টি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যানসহ ২৩৬টি যানবাহনে।
পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার রাতে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি আহতদের দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, গত কয়েকদিনের সহিংসতায় পুলিশের ১ হাজার ১১৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ১৩২ জন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপতালের আইসিইউতে আছেন চিকিৎসাধীন আছেন তিন জন।
ডিএমপির ৮০ স্থাপনায় ভাঙচুর-আগুন
সহিংসতায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৮০টি স্থাপনা ও কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন এক বার্তায় জানান, সংঘাতে ডিএমপির যে পরিমাণ স্থাপনা, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৬১ কোটি টাকা।
বুধবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ৮০টি স্থাপনার মধ্যে ৬৯টি পুলিশ বক্স। এগুলোর সবগুলোই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিকের উপ-কমিশনারের অফিস, সহকারী কমিশনারের অফিস পোড়ানো হয়েছে।”
পুলিশের এসব স্থাপনাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরসকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, আগুন দেওয়ার ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১৫৪টি মামলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
“গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৮০ জনকে। মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়তে পারে,” বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে মাসের শুরুতে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল মাসের প্রথম দিন থেকে। ধীরে আন্দোলনের মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে। এই দাবিতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি আসে।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ দুই জন, চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন ও রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয় সহিংসতায়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা হয়, সেদিন মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। রাজধানীর বাড্ডা, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর আসে। গোটা দেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা শুরু হয়।
রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাব স্টেশন, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনেও ভাঙচুর হয়।
সেদিন থেকেই ঢাকার উত্তরার পথে পথে, ধানমন্ডির শংকর ও সোবহানবাগ এলাকা, মোহাম্মদপুর ও বসিলা, মিরপুর এলাকায় গোলাগুলির খবর আসে।
ঢাকার বাইরে নরসিংদী কারাগারে হামলা করে ফটক ভেঙে ৮৫টি অস্ত্র লুট করা হয়। সন্দেহভাজন ৯ জঙ্গিসহ পালিয়ে যান আট শতাধিক বন্দি। এসব অস্ত্রের মধ্যে ২০টি পরে উদ্ধার হয়, গুলি উদ্ধার হয়েছে এক হাজারের কিছু বেশি।
রামপুরা, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী, কদমতলী এলাকা পাঁচদিন ধরে ছিল অচলপ্রায়। পুলিশ, বিজিবির সঙ্গে সংঘাতে ব্যাপকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের তথ্য আসে।
এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি হয়। তবে প্রতিদিনই কয়েকঘণ্টা করে কারিফিউ শিথিল করা হয়। এর তিন দিন পর নিয়ন্ত্রণে আসে যাত্রাবাড়ী ও রামপুরা-বাড্ডা এলাকা। এছাড়া রোববার থেকে তিনদিনের সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করে সরকার।
পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসার পর বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস আদালত খোলার সিদ্ধান্ত আসে।