“আমার জানা মতে আর রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে মোট দুইটি মামলা ছিল। এখন এই দুটি থেকেই তিনি মুক্ত,” বলেছেন আইনজীবী।
Published : 16 Jan 2025, 12:18 AM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় করা একটি মামলায় রায়ের পর সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারাগারে থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিতর্কিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন।
বুধবার সন্ধ্যায় কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ।
রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় তাকে সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, বলেছে তিনি।
রফিকুল আমীনের আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আজকের রায়ের পর ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় রফিকুল আমীন মুক্তিলাভ করেন। তবে তার স্ত্রী ফারহা দিবার সাজার ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তিনি কারাগারেই আছেন।
তিনি বলেন, ডেসটিনির আরেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেনের মুক্তি পাওয়ার কথা। তবে তার বিরুদ্ধে আর কোন মামলা আছে কি না জানতে হবে।
ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় বুধবার রফিকুল আমীনসহ কোম্পানির ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদেরকে ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ চার হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা যে অর্থদণ্ড করা হয়েছে তা যা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ডেসটিনির পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ, প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মো. সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা দিবা ও জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূঁইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৯ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেনকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়।
জামিনে থাকা হারুনুর রশিদও আদালতে ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পলাতক বাকি ১৫ আসামির বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক।
আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী বলেন, “তিন জন ১২ বছর ধরে কারাগারে আছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, কারাগারে থাকার বয়স সাজা থেকে বাদ যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের সাজা হয়ে গেছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি না তা যাচাই করা হবে।”
তবে রাতে তিনি বলেন, রফিকুল আমিনের স্ত্রীর ১২ বছর পূর্ণ হয়নি।
এই আইনজীবী বলেন, “আমার জানা মতে আর রফিকুল আমীনের বিরুদ্ধে মোট দুইটি মামলা ছিল। এখন এই দুটি থেকেই তিনি মুক্ত।”
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ২০১২ সালের ৩১ জুলাই মামলা দুটি করে৷ ২০১৪ সালের ৪ মে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থ পাচারের রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া হারুন অর রশীদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং পাচারের আরও ২ লাখ ৬ হাজার ডলার রয়েছে।