“ট্রেন যদি নাই যাবে, তাহলে টিকেট বিক্রি করল কেন? আমি তো মহাপবিপদে পড়লাম।”
Published : 28 Jan 2025, 01:02 PM
বেলা সাড়ে ১১টার অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ধরে জামালপুরে যাওয়ার কথা হাসান আলীর। কিন্তু কর্মীদের ধর্মঘটে ট্রেন চলাচল যে বন্ধ, সেটা তিনি জানতে পেরেছেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আসার পর।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুরের প্ল্যাটফর্মে যখন হাসান আলীর সঙ্গে কথা হয়, তার চোখেমুখে তখন রাজ্যের বিরক্তি।
“আমি জানতাম না ট্রেন চলাচল বন্ধ। গতকাল বিকেলেই টিকিট কাটলাম। পরিস্থিতি একদম বাজে। কথাবার্তা নাই, সবাই আন্দোলনে নেমে যাচ্ছে।”
হাসান আলী বলেন, “আজ আমার বন্ধুকে মেয়েপক্ষ দেখতে আসবে। দুপুর ১টায় সেখানে যাওয়ার কথা। না হয় একদিন পরে গেলেও সমস্যা হত না। এখন বেকাদায় পড়লাম। এখন ডবল ভাড়া দিয়ে বাসে যেতে হবে।”
একইরকম ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনাজপুরের যাত্রী সোহরাব হোসেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সকালে কমলাপুর থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণায় তিনিও বিপাকে পড়েছেন।
কক্সবাজারে যেতে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ৯ কিশোর। তাদের একজন মো. নাদিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে পর্যটন এক্সপ্রেসে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। এখন এখানে এসে শুনি ট্রেন যাবে না। আগে জানলে আমরা টিকেট কাটতাম না।”
বেসরকারি চাকুরে শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেনাপোল যাওয়ার জন্য গত ২৪ তারিখে টিকেট কেটেছিলাম। ১০টা ৪৫ মিনিটে রূপসী বাংলা ট্রেনে বেনাপোল যাওয়ার কথা ছিল। আমি বাসে যাতায়াত করতে পারব না। ট্রেন যদি নাই যাবে, তাহলে টিকেট বিক্রি করল কেন? আমি তো মহাপবিপদে পড়লাম।”
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনরত রেলকর্মীরা ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে ঘুরে-ঘুরে স্লোগান দিচ্ছেন।
পাশেই রেলের লাইনের কাজ করছেন কয়েকজন। লাইনের উপর অন্তত তিনটি ট্রেন দাঁড়ানো রয়েছে।
আশপাশে কিছু যাত্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ টিকেটের টাকা ফেরত নেওয়ার খোঁজ করছেন, কেউ আবার বিআরটিসির বাসে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বন্ধ থাকা ট্রেনের যাত্রীদের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিআরটিসির এসব বাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এসব বাস ঢাকার কমলাপুর এবং বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহে যাত্রী পৌঁছে দেবে।
যাত্রীরা তাদের রেলের টিকেট ব্যবহার করে এসব বাসে চড়তে পারবেন। আর যাত্রী চাইলে টিকেটের টাকা রেলের কাউন্টার থেকে ফেরত নিতে পারবেন।
সকাল ১০টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ, বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
এ সময় উপদেষ্টাকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন যাত্রীরা।
উপদেষ্টা বলেন, “যাত্রীদের ইমিডিয়েট রিলিফের জন্য বিআরটিসির বাস দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসি বাস রেলের ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।”
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি সোমবার মধ্যরাত থেকে এই কর্মবিরতি শুরু করেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন পরিচালকদের সংগঠন রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।