উপ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনুপ্রবেশ না থাকলে ভারতের মাটিতে কীভাবে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেল?
Published : 31 Aug 2024, 11:20 AM
ভারতের মেঘালয়ে উদ্ধার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ শনিবার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম।
মেঘালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে এনডি টিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে পান্নার মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।
এজন্য তার মৃতদেহ ডাউকি-তামাবিল আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেক পোস্টে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায় মেঘালয় পুলিশ।
তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬ অগাস্ট পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ের দোনা ভোই গ্রামের একটি সুপারি বাগান থেকে পান্নার অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকাটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।
মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া পাসপোর্ট থেকে পান্নার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্বাসরোধের কথা বলা হয়েছে। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্নও রয়েছে।
কপালে ছুলে যাওয়া ও ক্ষতচিহ্নের কথা বলা হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। পরে তার মৃতদেহ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
পান্নার কাছে প্রায় দুই কোটি ডলার ছিল বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। তবে মৃতদেহ উদ্ধারের সময় কোনো মুদ্রা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জেলা পুলিশের প্রধান গিরি প্রসাদ।
মেঘালয় পুলিশ পান্নার লাশ ২৬ অগাস্ট উদ্ধারের কথা জানালেও তার ভাগ্নে লাইকুজ্জামান তালুকদার মিন্টু ২৪ অগাস্ট দাবি করেছিলেন- তার মামার সঙ্গে থাকা অন্যরা জানিয়েছেন, ওইদিন সকালে শিলংয়ে একটি পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে মারা গেছেন তার মামা।
পান্নার মৃতদেহ বর্তমানে খেইহরিয়াত সিভিল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
শুক্রবার থেকেই লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া
পান্নার মৃতদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকার কথা শুক্রবারই জানায় মেঘালয় রাজ্য সরকার।
ওইদিন রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী (স্বরাষ্ট্র) প্রেস্টন টাইনসং বলেন, “আমরা শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ও ভারতের হাই কমিশনকে মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়টি জানিয়েছি। এখন পরবর্তী করণীয় জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
“পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবকিছু দেখভাল দেখছে এবং আমাদের রাজ্য সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য মেঘালয়ে এসে পৌঁছানোর পর তাদের কাছে মৃতদেহ বুঝিয়ে দেওয়া।”
এর আগে পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জেলা পুলিশের প্রধান গিরি প্রসাদ বলেছিলেন, মৃতদেহ পেতে হলে পরিবারের সদস্যদের মেঘালয় সরকারের কাছে যেতে হবে এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এটি হস্তান্তর করা হবে।
আর পান্নার পরিবারের এক সদস্য ইউএনআইকে বলেছেন, মৃতদেহ ফেরাতে ইতোমধ্যে তারা ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
সেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়াতেই পান্নার মৃতদেহ পরিবারের হস্তান্তর করা হচ্ছে।
মেঘালয় রাজ্য পুলিশের একজন কর্মকর্তার বরাতে দ্য শিলং টাইমসও জানিয়েছে, শনিবার এই হস্তান্তর হতে পারে।
শুক্রবার পুলিশের ওই কর্তা শিলং টাইমসকে বলেন, “শুক্রবার সকালে অনুমোদিত ব্যক্তি মৃতদেহটি সঠিকভাবে শনাক্ত করেছেন এবং এরপর পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
“সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার সকালে ডাউকি সীমান্ত দিয়ে মৃতদেহ পান্নার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে হস্তান্তরের পুরো বিষয়টির সমন্বয় করছে ভারতের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের এক কর্মকর্তা শুক্রবার শিলং টাইমসকে বলেন, “আমরা (পান্নার) মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আছি। ডাউকি সীমান্ত থেকে মৃতদেহ বাংলাদেশে নিয়ে যেতে আমরা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি।
“আমরা সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছি এবং পান্নার মৃতদেহ সুষ্ঠুভাবে হস্তান্তরে বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে বিএসএফ।”
কলকাতা এবং বাংলাদেশে থাকা পান্নার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও স্বজনরা এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে রক্ষা করছেন বলে জানিয়েছে শিলং টাইমস।
কিছু প্রশ্ন
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চললেও তার মৃত্যুর কারণ, তিনি কীভাবে সীমান্ত পেরোলেন- এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।
পান্নার সঙ্গে প্রায় দুই কোটি ডলার ছিল বলে পরিবার যে দাবি করেছে, সেটি নিয়েও ধন্দে আছে মেঘালয় পুলিশ।
কারণ পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জেলা পুলিশের প্রধান গিরি প্রসাদ বলেছিলেন, অর্থকড়ির বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
“আমরা যখন লাশ উদ্ধার করি, তখন বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও স্মার্টওয়াচ ছাড়া কোনো অর্থকড়ি পাওয়া যায়নি।”
পান্নার বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছে মেঘালয় রাজ্য সরকারও। বাংলাদেশের একজন পলাতক রাজনীতিবিদ কীভাবে সীমান্তের নজরদারি এড়িয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকলেন, সেটি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
উপ মুখ্যমন্ত্রী (স্বরাষ্ট্র) প্রেস্টন টাইনসং বলেছেন, তারা ঘটনাটি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় আছেন এবং সত্যটা জানা দরকার।
“আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে শুধু মৃতদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া। কিন্তু রাজ্য সরকার পুরো বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে।”
পান্নার মৃত্যুর ঘটনাটি ‘হত্যাকাণ্ড’ কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই কেবল সেটি পরিষ্কার হবে।
ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যু ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন টাইনসং।
ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশের এমন একজন শীর্ষ রাজনীতিকের মৃতদেহ আবিষ্কারের ঘটনায় তোপের মুখে পড়া ভারতের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর বিএসএফ ঘটনার তদন্ত করার বলেছে।
উপ মুখ্যমন্ত্রী টাইনসং দাবি করেছেন, বিএসএফ রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল, পান্না ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দাবি করা হলেও সেখান থেকে অনুপ্রবেশের কোনো কোনো প্রশ্নই আসে না।
“কিন্তু এর দুই-তিন দিন পরই ভারতীয় ভূখণ্ডের দেড় কিলোমিটার ভেতরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়,” বলেন টাইনসং।
মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে রাতে কারফিউ এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ ও পুলিশকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ না থাকলে ভারতের মাটিতে কীভাবে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেল?
উপ মুখ্যমন্ত্রী টাইনসং আরও বলেন, “পান্নাকে বাংলাদেশে হত্যার পর মৃতদেহ মেঘালয়ে ফেলে রাখার সম্ভাবনাও রয়েছে।”
তাছাড়া মৃতদেহের সঙ্গে কোনো টাকাও পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।
তাই সব ধোঁয়াশা দূর করতে রাজ্য সরকার ঘটনাটি আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন টাইনসং।
পান্নার লাশ পড়ে ছিল সুপারি বাগানে, মৃত্যু ‘শ্বাসরোধে’, দাবি মেঘালয় পুলিশের