মাঠে-ঘাটে ভোটের উত্তাপ থাকলেও বড়দিনের উৎসবের জন্য বর্ণিল সাজে সেজেছে গির্জা, পাঁচ তারকা হোটেল আর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর।
Published : 24 Dec 2023, 11:11 PM
ভোটের ডামাডোলের মধ্যে উৎসবের বার্তা নিয়ে এসেছে বড়দিন।
মাঠে-ঘাটে ভোটের উত্তাপ থাকলেও সোমবারের উৎসবের জন্য বর্ণিল সাজে সেজেছে গির্জা, পাঁচ তারকা হোটেল আর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর।
খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবের আগে তেজগাঁও ধর্মপল্লীতে (জপমালা রানী গির্জা) রোববার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে প্রাক প্রস্তুতি প্রার্থনা।
সেখানে ফাদার সুব্রত বনিফাস গোমেজ প্রার্থনা পর্ব পরিচালনা করেন আর বড়দিনের তাৎপর্য আর যীশুর জীবনী ও তার নানা বাণী ভক্তদের শোনান। ফাদার প্রভাস রোজারিও নানা উপদেশ বাণী দেন আগতদের।
শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীরা অংশ নেন প্রার্থনায়।
বড়দিন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতার সেই স্বপ্নপূরণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সুখী-সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।”
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবন স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাব- এ আমার প্রত্যাশা।”
চার্চে চার্চে সাজসাজ রব
ঢাকার পুরনো গির্জা জপমালা রানী গির্জায় বড়দিনের আগের রাতে প্রার্থনায় সুব্রত বনিফাস গোমেজ বলেন, “যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর আমাদের কাছে একটি আনন্দঘন শুভদিন। এদিনে আমরা পরিবারের সদস্যরা আঘাত পান, এমন কোনো কাজ করব না। প্রার্থনা করব, ঘুরে বেড়াব, আনন্দ করব।”
ফাদার কমল কোড়াইয়া বলেছেন, “ইউরোপে ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর বড়দিনের উৎসব শুরু হয়। আজ আমরা যেটা শুরু করেছি সেটিকে প্রাক প্রস্তুতি প্রার্থনা বলতে পারেন।”
২৫ ডিসেম্বর সকালে বড়দিনের মূল প্রার্থনা শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ফাদারদের বক্তব্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্টির কথা উঠে এসেছে।
গত ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বড়দিনে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
বড়দিন উপলক্ষে দেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
রোববার রাতে রাজধানীর কাকরাইলে 'সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল' পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ বড়দিন উৎসবমুখর ও নিরাপদ রাখতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বলে রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রতিটি গীর্জায় স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশের টহল বৃদ্ধি এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশী চৌকি স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো হবে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নির্দেশনাগুলো হল
. প্রতিটি গীর্জায় রাত্রিকালীন ভিডিও ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
. প্রতিটি গীর্জার জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও আর্মডব্যান্ড নির্ধারণ করে দেয়া। স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা স্থানীয় থানায় প্রেরণ করা ও থানার অফিসারের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের ব্রিফিং করার ব্যবস্থা করা।
. গীর্জায় দর্শনার্থীদের ব্যাগ বা পোটলা ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা। তাছাড়া গীর্জা এলাকায় সন্দেহজনক কোনো ব্যাগ-পোটলা পরে থাকতে দেখলে বা দৃষ্টিগোচর হলে নিয়োজিত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক অবহিত করা।
. আর্চওয়ে গেট স্থাপন এবং মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার।
. প্রতিটি গীর্জায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন এবং অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
. আলোকসজ্জার কাজে গুণগতমান সম্পন্ন বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা।
. আনন্দ উৎসবে মাদকের ব্যবহার, ফানুস উড়ানো ও আতশবাজি করা থেকে বিরত থাকা।
. প্রতিটি গীর্জা ও অনুষ্ঠান এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং বিকল্প আলোর (জেনারেটর) ব্যবস্থা রাখা।
. প্রতিটি গীর্জার জন্য পরিদর্শন রেজিস্ট্রার প্রস্তুত এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
. আবাসিক এলাকায় বাড়ির ছাদ, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ডিজে পার্টি এবং উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
. ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকা।
. স্থানীয় কাউন্সিলর, গণমান্য ব্যক্তিবর্গ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা এবং তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।
. কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা তৈরি হলে দ্রুত পুলিশকে জানানো এবং জরুরি প্রয়োজনে গীর্জা কমিটি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট থানার ফোকাল পয়েন্ট অথবা ৯৯৯ এর সেবা গ্রহণ করা অথবা ম্যাসেজ টু কমিশনার (M2C) এর জরুরি নম্বর ০১৩২০-২০২০২০ ও ০১৩২০-১০১০১০ এসএমএস করা।