“এখন মেলা কেমন যেন প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছে, এখানে বাণিজ্যটা মুখ্য হয়ে যাচ্ছে,” বলছেন নাট্য গবেষক বাবুল বিশ্বাস।
Published : 13 Feb 2023, 08:45 PM
একুশের বইমেলা ঘিরে প্রতি বছর নতুন নতুন বই প্রকাশিত হলেও গবেষণাধর্মী বইয়ের আকাল ধরা পড়ছে নাট্যগবেষক ও থিয়েটার আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা বাবুল বিশ্বাসের কাছে।
সোমবার মেলা প্রাঙ্গণে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কয়েকটা স্টলে গিয়ে দেখলাম, চিন্তাকে উস্কে দেওয়ার মতো গবেষণাধর্মী বই তেমন নেই।
“বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গড়তে হলে তো আমাদের গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যা বাড়তে হবে এবং সেই বই তরুণদের মাঝে ছড়িতে দিতে হবে। বইমেলা সেই কাজটিই করবে। কিন্তু বইমেলা সেই ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে।”
সোমবার ছিল এবারের বইমেলার ত্রয়োদশ দিন। এদিন নতুন বই এসেছে ১০৫টি। এছাড়া অন্য সব অনুষ্ঠানও ছিল।
প্রকৃতির মতো পহেলা ফাল্গুনের আগের দিন বইমেলায় ছিল বসন্ত বরণের প্রস্তুতি। দর্শনার্থীদের অনেককেই এদিন দেখা যায় বসন্তের সাজে। বিভিন্ন স্টলে বিক্রয়কর্মীরাও ছিলেন বাসন্তী সাজে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বান্ধবীকে একই রঙের পোশাকে দেখা যায় ঐতিহ্যের স্টলের সামনে। তারা জানান, পহেলা ফাল্গুনে সকাল থেকে তারা সারা দিন ঘুরবেন এবং বিকালে বইমেলায় আসবেন।
পহেলা ফাল্গুনকে ঘিরে প্রকাশকরাও আশা করছেন বই বিক্রি বাড়বে। এদিন লোক সমাগমের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেন জানান ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক কাজল।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রকাশিত বেশিরভাগ বই মেলায় চলে এসেছে। পহেলা ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং অন্যান্য ছুটির দিনে একটু বেশি বিক্রি হয়। এবারও সেই ধারাবাহিকতা থাকবে বলেই আশা করছি।”
এখন বইমেলায় পরিসর ও জনসমাগম বাড়লেও ‘প্রাণহীন’ ঠেকছে বাবুল বিশ্বাসের কাছে।
তিনি বলেন, “১৯৮২ সালে প্রথম বইমেলায় এসেছিলাম। তখন মেলায় বাঁশের মাচা থাকত, আমরা সেখানে বসে আড্ডা দিতাম। এরপর প্রায় প্রতি বছরই মেলায় আসি। ভীষণ ভালো লাগে।
“তবে এখন মেলা কেমন যেন প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছে। এখানে বাণিজ্যটা মুখ্য হয়ে যাচ্ছে। প্রাণখোলা আড্ডা দেওয়ার জন্য, বসার জন্য তেমন ব্যবস্থা নাই।”
অনুষ্ঠান
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন হারিসুল হক ও অপূর্ব শর্মা। সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, “আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন, যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে যুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত।
“বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সকল বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।”
সভাপতির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, “আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরূহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন, তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।”
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন ও মামুন রশীদ।
সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান ও জিললুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল এবং জয়ন্ত রায়। এছাড়াও ছিল ঝর্ণা আলমগীরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানী’-এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, অনন্যা আচার্য্য, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মো. রেজওয়ানুল হক, ফারহানা শিরিন, শরণ বড়–য়া এবং নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র মুখার্জি (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), অমিত দাস (গিটার) এবং মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।
পহেলা ফাল্গুনে যা থাকবে
মঙ্গলবার বইমেলার চতুর্তশ দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেবেন সম্পদ বড়ুয়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর ও মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফকরুল আলম।