বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৮ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
Published : 02 Nov 2023, 03:39 PM
কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। আর মোট শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগের সম্মতি লাগবে।
বৃহস্পতিবার সংসদে এমন বিধানসহ শ্রম আইনের বেশকিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩ পাস হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন এবং তা কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়।
সকালে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।
বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৮ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কোনো মালিক তার প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোনো নারীকে তার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারবেন না বা কোনো নারী ওই সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না।
বিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি হাই কোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য হয় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও সেভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সরাসরি আপিল বিভাগে।
অন্যদিকে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন লাগে। এখন সেটিকে এখন ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।
২০০৬ সালে দেশে প্রথম শ্রম আইন করা হয়। এরপর আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়। এই আইনটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ ছিল। সরকার চলতি মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এই আইনটি আবার সংশোধনে করা হল।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে শতকরা ২০ ভাগ এবং তিন হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে তা নিবন্ধনের অধিকারী হবে না।
একই মালিকের অধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান যদি একই শিল্প পরিচালনার উদ্দেশ্যে একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান যেখানেই স্থাপিত হোক না কেন, তা একটি প্রতিষ্ঠান বলেই গণ্য হবে।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোনো নির্ধারিত এলাকায় একই প্রকারের কোন নির্ধারিত শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক বিশ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন- এ ধরণের সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে সেখানকার মোট শ্রমিকের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এর সদস্য হতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিক সদস্য হলে ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন মিলবে।
পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি
পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, যে শিল্পে কাজ করে একজন শ্রমিক ৩০ দিন খেতে পারে না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারে না। ২০ দিনের মাথায় বেতন শেষ হয়ে যায়, সেই শিল্পের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে মূল্য বাড়াতে হবে। সবকিছুর সমন্বয় করে শ্রমিক স্বস্তিতে না থাকলে দেশ স্বস্তিতে থাকবে না।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তত আলী ফরাজী বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকেরা অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয় কিন্তু মালিকপক্ষ সেভাবে যত্নশীল না। মানবিকভাবে দেখলে তাদের স্বার্থগুলো পূরণ করতে পারি।”
রওশন আরা মান্নান বলেন, “কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিকের অনেক টাকা, তারা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। শ্রমিকদের অনেক কষ্ট, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে তাদের ফুরাবে না।”
ফখরুল ইমাম বলেন, “আজকে গার্মেন্টস শিল্প খুব মুশকিলে আছে। সরকার ও গার্মেন্টস মালিকদের এ নিয়ে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।”