ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য আইনগুলোর একটি’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।
Published : 11 Apr 2023, 09:42 PM
বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ওপর ‘সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের’ ঘটনার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সোমবারের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের উপর সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
“তিনি বলেছেন, যখন আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গভীর করতে চাইছি তখন বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।”
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শুরু হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিটের মত আলোচনা চলে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা বিবৃতিতে তুলে ধরেন বেদান্ত প্যাটেল।
এদিকে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয় মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলকে।
জবাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য আইনগুলোর একটি’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “সর্বশেষ বৈশ্বিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬২ অবস্থানে ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ ধাপ নিচে।
“এবং এই স্কোরের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। যা সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য আইনগুলোর একটি।”
পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র আরও বলেন, “এ আইন নিয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগ খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। কোনো জাতি ও তার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম এবং ওয়াকিবহাল নাগরিক হচ্ছে মুখ্য।
“গণমাধ্যম ও এর বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি এটা যে ক্ষতি করবে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”
র্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্র এবং একজন সাক্ষাৎকারদাতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক প্রশ্নে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “আমি আবারও বলছি, যে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং এটা আমাদের প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিবেদন ও ভিডিওর বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখবে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে পাঠানো উষ্ণ বার্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উদারভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা আব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
“একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐকমত্য প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।”
তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, উপ-রাষ্ট্রদূত ফেরদৌসী শাহরিয়ার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ব্লিংকেনের উপদেষ্টা ডেরেক শোলে, জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা ম্যাকডোনাল্ড এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আকতার উপস্থিত ছিলেন।