যৌথ অভিযান শুরুর পর থেকে এ যাবৎ প্রায় ৮০০০ জন গ্রেপ্তার, ৯০০০ এর বেশি অবৈধ অস্ত্র ও ৩ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
Published : 17 Apr 2025, 08:12 PM
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ না পাওয়ার মধ্যে তাদের উদ্ধারে অভিযানে নামার তথ্য দিয়েছে সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর অবস্থান সনাক্ত করার পর অভিযান পরিচালনার কথা বলা হয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বিশেষ এ অভিযান পরিচালনার তথ্য দিয়ে বলেন, “এই মুহূর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো, পাঁচজনকে ধরার কারণে নিরাপত্তার কোনো ব্যাঘাত হয়নি, নিরাপত্তা আরও জোরালো করা হচ্ছে।”
বিঝু উৎসবে বন্ধুদের সঙ্গে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। উৎসব শেষে মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ফেরার পথে দিঘীনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন তারা। পরের দিন বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে অটোরিকশা চালকসহ ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করার খবর আসে। পরে অটোরিকশা চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় পাহাড়ের সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করা হলেও তারা তা অস্বীকার করে।
এদিন সেনাবাহিনীর বিফ্রিংয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেদের অপহরণের প্রসঙ্গও আসে। গত ছয় মাসে বহু জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রলারও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি জেলেদের ফেরত দিলেও ২টি পণ্যবাহী ট্রলার আটকে রাখা হয়। আরাকান আর্মিদের বিরুদ্ধেই এ নিয়ে অভিযোগ বেশি।
জেলেদের মধ্যে এ নিয়ে অস্থিরতা দূর করতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “নাফ নদীতে জেলেদের যে অসুবিধা হচ্ছে, এটা নিয়ে আমাদের প্রাথমিকভাবে কোস্টগার্ড ও বর্ডারগার্ড কাজ করছে, এটা চলমান আছে। অনেক জেলে এই পর্যন্ত চলে আসছে, বাকিদের বিষয়ে এখনও আলোচনা চলমান আছে।
“প্রাথমিক পর্যায়ে কোস্টগার্ড ও বিজিবি আলোচনা করছে, পরবর্তীতে সেনাবাহিনী সেটা আলোচনা করবে। তবে আমরা আশাবাদী খুব শিগগির এই বিষয়ে সমাধান হবে।”
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলেও তুলে ধরেন এই সেনা কর্মকর্তা।
মার্চ ফর গাজা ইস্যুতে ‘জঙ্গিরা‘ তাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে, তাদের নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেখানে কালো পতাকাধারীদের সেনাবাহিনী রোধ করেছে। আসলে কালো পতাকাধারী হলেই যে জঙ্গি এটার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে এই ব্যপারে সেনাবাহিনী সোচ্চার আছে। গোয়েন্দাবাহিনীও এই ব্যপারে তৎপর আছে।”
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে স্টাফ কর্নেল শফিকুল বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কোনো বাধা পাচ্ছি না কোনো পক্ষ থেকে। তবে আপনাদের মনে রাখতে হবে আমরা যে কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারের পরে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য দিয়ে দেই (পুলিশের কাছে), সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।
“ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার প্রয়োগ করে গত দুই মাসে সেনাবাহিনী বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত মোট ২ হাজার ৪৫৭ জনকে এবং এ যাবৎ প্রায় ৮০০০ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। যাদের মাঝে কিশোর গ্যাং তালিকাভুক্ত আসামি, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক, দালালচক্র, চাঁদাবাজ ডাকাত ও ছিনতাইকারী আছে।
“এই দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র, ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং এ যাবৎ প্রায় ৯ হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র, ৩ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।”
সেনাবাহিনীর গত দুই মাসের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শফিকুল ইসলাম মিয়ানমারের ভূমিকম্পে সশস্ত্র বাহিনীর জরুরি উদ্ধারকাজে সহায়তার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, এ সময়কালে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা কমাতে সহায়তা করাসহ সেনা সদস্যরা শিল্পাঞ্চল ছাড়াও গত দুই মাসে ২৩২টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ৩৭টি, সরকারি অফিস সংক্রান্ত ২৪টি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ৭৬টি এবং অন্যান্য ঘটনা ছিল ৯৫টি।
আরও পড়ুন
খাগড়াছড়িতে খোঁজ মেলেনি অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর, পরিবারের উদ্বেগ
পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি চেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ‘আদিবাসী’দের বিবৃতি
'বিঝু' শেষে ফেরার পথে চবির ৫ শিক্ষার্থী 'অপহরণ', ইউপিডিএফের অস্বীকার