তাদের সনদে বারকোড থাকবে। তথ্য দেওয়া হবে ডিএমপির ওয়েবসাইটে, যাতে বারকোড দিয়ে যে কেউ পরিচয় যাচাই করতে পারেন, বলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
Published : 11 Mar 2025, 01:35 AM
কোনোধরনের ‘বেতন-ভাতা ছাড়াই’ ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল ও আবাসিক এলাকায় দায়িত্বরত বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের প্রধানদের পুলিশের ‘অক্সিলারি ফোর্সের’ দায়িত্ব দেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরে তারা বলছেন, সহায়ক বাহিনীকে ‘প্রয়োজনে যে কাউকে’ পুলিশর মতই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তাতে ‘অঘটনের আশঙ্কা’ অমূলক নয়।
‘পুলিশের স্বল্পতা’ বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ‘তৎপরতা’ বাড়াতে ‘সহায়ক পুলিশ অফিসার’ হিসেবে বাহিনীর সঙ্গে এই নতুন জনবল যুক্ত করতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির ভাষ্য, চাইলেই এ মুহূর্তে ‘প্রয়োজনীয়’ সব স্থানে পুলিশ সদস্যের অবস্থান ‘নিশ্চিত করতে’ পারছে না ডিএমপি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেখানকার কাউকে ‘পুলিশি ক্ষমতা’ দেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপি সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিভিন্ন মার্কেট বা আবাসিক এলাকার বিদ্যমান নিরাপত্তা কর্মীদের যিনি ইনচার্জ রয়েছেন, তাদেরকে কানেক্ট করছি। আমরা ঢাকার ৫০টি থানার মাধ্যমে এদের নাম-পরিচয় ও ছবিসহ তালিকা সংগ্রহ করেছি। থানার মাধ্যমেই তাদের হাতে নিয়োগপত্র চলে যাবে।”
তারা কবে থেকে কাজ করবেন, এ বিষয়েও ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ জানানোর কথা বলেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে ৪১৯ জনের একটি তালিকা করেছি। তবে এখানে নতুন কিছু যুক্ত হতে পারে, আবার কেউ বাদও পড়তে পারে।”
তারা কবে থেকে কাজ শুরু করবেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, “বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
বাংলাদেশের বাস্তবতায় যেখানে গ্রেপ্তারের বিষয়গুলোতে পুলিশই শতভাগ স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারে না, সেখানে এই ‘অক্সিলারি ফোর্স’ কতটা স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারবে তা নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ ব্যবস্থাপনাও বাংলাদেশে ভালো ফল আনেনি। সেখানে অনেক দেশে ‘অক্সিলারি ফোর্স’ ব্যবস্থাপনা চালু থাকলেও বাংলাদেশের পুলিশ এটি নিয়ে নতুন করে ‘চ্যালেঞ্জের মুখে’ পড়তে পারে।
তবে সঠিকভাবে ‘সুপারভিশন’ করতে পারলে ‘সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে’ এটিতে সমস্যা দেখছেন না সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা। ‘ভেরিফাইড ও ট্রেইন্ড লোক’ যুক্ত করতে পারলে এবং তাদের ‘সুপারভাইজ করতে’ পারলে এটা কাজে দেবে, বলছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, “এই কনসেপ্টটাই আমাদের বাস্তবতার বিপরীত। এখন কোথাও কোথাও দেখা যাবে, তারা গ্রেপ্তার করে নিজেরাই বিচার করছে। শারীরিকভাবে আঘাত করল বা হেয় করল, নিজেরা বিচার করার এ ধরনের একটা প্রবণতা তৈরি হয়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক না বাংলাদেশের বাস্তবতায়।”
“কোনো ব্যক্তির সাথে রাগ-অনুরাগের বিষয় থাকে। এখানে যেহেতু বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাজনৈতিক একটা বিষয়ও থাকে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশের এই সহায়ক শক্তি সমানভাবে আইনি ক্ষমতা বাস্তবায়ন করতে পারবে, এটা বাংলাদেশের বাস্তবতায় খুব কঠিন। খুব একটা বেশি ভরসার জায়গা দেখছি না।”
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি সামনে আনেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
তিনি বলেন, “মেট্রোপলিটন পুলিশের আইনবলে অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা আমার আছে। আমি সেই মোতাবেক অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে যারা প্রাইভেট নিরাপত্তার লোকেরা আছেন ওনাদের নিয়োগ দিচ্ছি।”
ডিএমপি কমিশনার নিজের যে ‘ক্ষমতাবলের’ কথা বলেছেন সেই ‘ঢাকা মহানগরী পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬’ এর ১০ ধারায় বলা আছে, “কোনো ক্ষেত্রে এই বাহিনীকে সাহায্য করা প্রয়োজন মনে করিলে পুলিশ কমিশনার যে কোনো ব্যক্তিকে সহায়ক পুলিশ অফিসার নিয়োগ করিতে পারিবেন।”
“নিযুক্ত হওয়া প্রত্যেক সহায়ক পুলিশ অফিসার একটি সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হইবেন এবং অন্য যেকোন পুলিশ অফিসারের অনুরূপ ক্ষমতা ও সুবিধাদি ভোগ করিবেন, অনুরূপ কর্তব্য সম্পাদন করিতে বাধ্য থাকিবেন, অনুরূপ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং একইরূপ কর্তৃত্বের অধীনে থাকিবেন।”
শপিংমল ও আবাসিক এলাকার বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “তাদের হাতে একটি ব্যান্ড থাকবে যে সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা। আইন মোতাবেক উনি আমি বা আমার পুলিশ অফিসার যে দায়িত্ব পালন করেন, সেই একইরূপ দায়িত্ব পালন করবেন।
“যেকোনো ব্যক্তিকে উনারা গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন এবং সাথে সাথে পুলিশ অফিসারকে আইনগতভাবে যে প্রোটেকশান দেওয়া হয়েছে উনারা সেই প্রোটেকশানটা পাবেন। এ কার্যক্রম আমি শুরু করেছি।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “উনি যখন পুলিশ কমিশনার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তিনি সিম্পলি পুলিশ অফিসার। পুলিশ অফিসার যে দায়িত্ব পালন করেন, উনি একই দায়িত্ব পালন করবেন। উনি যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা বা সক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন।”
কোন প্রক্রিয়ায় কাজ করবে ‘অক্সিলারি ফোর্স’?
বিষয়টি নিয়ে কাজ করা ডিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তার জন্য আলাদা কোনো পোশাক থাকছে না, তারা শুধু একটা আর্মব্যান্ড পাবেন। তাদেরকে কোনো অস্ত্রও সরবরাহ করা হবে না। প্রত্যেককে একটি করে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চেষ্টা করব সার্টিফিকেটটা যেন আইডি কার্ডের মত তারা সঙ্গে রাখতে পারেন। এর মধ্যে একটি বারকোড থাকবে। আর যতজনকে এই সহায়ক পুলিশ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিস্তারিত তথ্য ডিএমপির ওয়েবসাইটে আপলোড করা থাকবে। কারও সন্দেহ হলে ওই বারকোডটি স্ক্যান করে তার নাম-পরিচয় যাচাই করতে পারবেন।”
যেন কেউ এর সুযোগ না নিতে পারেন সেজন্যও বারকোড দেওয়া হচ্ছে বলে তুলে ধরে তিনি।
ডিএমপির ওই কর্মকর্তা বলেন, “এই সহায়ক পুলিশ অফিসার ‘এজ লাইক’ একজন পুলিশ অফিসারের মতই ক্ষমতা পাবেন বলা হলেও তারা নির্ধারিত কোনো পদমর্যাদার (যেমন, এসআই বা কনস্টেবল) না। তাদের পদটাই হবে অক্সিলারি পুলিশ অফিসার।”
তিনি বলেন, “যাদেরকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে, তারা কোথাও না কোথাও দায়িত্বরত আছেন। এখন শুধু তারা পুলিশের পাওয়ারটা পাবেন। ওদের মাধ্যমে আমাদের নজরদারি বাড়ানোর সক্ষমতা বাড়বে।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ধরুন একজন সাধারণ মানুষ কোথাও অন্যায় বা অপরাধের প্রতিবাদ করতে গেলে বা ব্যবস্থা নিতে চাইলে তিনি যদি বাধাপ্রাপ্ত হন সেটি কিন্তু অপরাধ হবে না। কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার বাধাপ্রাপ্ত হলে ‘সরকারি কাজে বাধার’ অভিযোগে লিগ্যাল ডিফেন্সটা পাবেন।
“কমিউনিটি পুলিশিংয়ে মনোনীত ব্যক্তিকে পুলিশিং পাওয়ারটা অ্যাম্পাওয়ার করা হয়নি, এখানে করা হয়েছে। আমরা ওই জায়গাটাতে তো পুলিশ অফিসার দিতে পারছি না, তাই সেখানে যে আছে তাকে পুলিশে কনভার্ট করছি।”
অধ্যাদেশ অনুযায়ী পুলিশ কর্মকর্তার মত সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা বলা হলেও এই সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো আর্থিক সুবিধা পাবেন না বলে তুলে ধরেন ডিএমপির ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন “তারা কোনো না কোনো জায়গা থেকে বেনিফিট পাচ্ছেন। এখন তাদের জন্য আলাদা বেতন ভাতার ব্যবস্থা করতে গেলে পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।”
‘সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা’ নির্ধারিত থানার আওতায় দায়িত্ব পালন করবেন, প্রাথমিকভাবে বড় বড় বিপণী বিতানগুলোতে তারা দায়িত্ব পালন শুরু করবেন বলেও তুলে ধরেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
পরিচয় যাচাই করে প্রশিক্ষিত লোক নিতে পারলে এবং তদারকি করতে পারলে ‘সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা’ যুক্ত করা কাজে দেবে বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের নেওয়া হচ্ছে তারা ট্রেইন্ড লোকজনই হবে, তারা প্রাইভেট সিকিউরিটির লোক। এরা দেখেন ভূতপূর্ব কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীর লোকজন হবে। তাদেরকে অস্ত্রের ট্রেনিং দেওয়া লাগবে না, আইন কানুনের ব্যাপারে শর্ট কোর্স একটা করে দিলেই হয়ে যাবে। যদি পুলিশের রিটায়ার্ড লোক থাকে, এগুলি খুব ডিফিকাল্ট না।”
অন্য দেশে কেমন এই ‘অক্সিলারি ফোর্স’?
ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের পুলিশেই এই ‘অক্সিলারি ফোর্সের’ প্রচলন রয়েছে। তবে সেসব দেশে একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে তাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
লন্ডন পুলিশ ‘ভলান্টিয়ার অ্যাজ অ্যান অক্সিলারি অফিসার’ কার্যক্রমের মাধ্যমে উৎসাহীদের আবেদন গ্রহণ করে।
লন্ডন পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তাদের সহায়ক হিসেবে যোগ দিতে কমপক্ষে ২০ বছর বয়সী, মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ, মাধ্যমিক স্কুল, ডিপ্লোমা বা সমমানের ডিগ্রিসহ ‘পুলিশ ফিটনেস’ পরীক্ষায় কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয়।
এছাড়া দৃষ্টিশক্তি, প্রাথমিক চিকিৎসার সনদ, গাড়ি চালানোর নথিসহ লাইসেন্স এবং একবারের ৫০ ঘণ্টার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সক্ষম হতে হয়।
এরপর আবেদন থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ফিটনেস টেস্ট, সাক্ষাৎকার শেষে যোগ্যদের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে লন্ডন পুলিশ।
লন্ডন পুলিশের সঙ্গে যুক্তরা সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহায়তা, অপরাধ প্রতিরোধ কর্মসূচি, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান এবং তথ্য বুথগুলোতে কাজ করে থাকেন। তাদের প্রতি মাসে অন্তত ১৫ ঘণ্টা কাজের কথা বলা আছে।
বাংলাদেশের কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং
যে কোনোধরনের অপরাধ প্রতিরোধ, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ও মানুষের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমিয়ে পুলিশিং কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর ধারণা থেকে বাংলাদেশ পুলিশের ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ কার্যক্রমটি শুরু হয়।
১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহে প্রথম কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু হয়। এর পরের বছর ঢাকা মহানগরীর দুটি থানায় নতুন এই ধারণা নিয়ে কাজ শুরু হয়। আর ২০০৫ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির সহায়তায় পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই ‘গণমুখী’ পুলিশি ব্যবস্থা।
কমিউনিটি পুলিশিং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের কাঠামোগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি গঠন করে প্রান্তিক পর্যায়ে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়া ও অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে ‘নানা উদ্যোগ’ দেখা গেছে।
এ ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করতে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ‘বিটে’ ভাগ করে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হয়।
থানার ‘সেকেন্ড অফিসার’ পদাধিকার বলে সিপিও বা কমিউনিটি পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে গঠিত কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির স্থানীয় জনসাধারণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অপরাধ দমন করা এবং অপরাধের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে আসছিলেন।
থানা এলাকার প্রতিটি বিটে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই ওই এলাকার সার্বিক অপরাধ কার্যক্রম নিয়মিত নজরদারি করছেন কি না তা তদারকি করছিলেন সিপিও।
এ প্রক্রিয়ায় ‘উঠান বৈঠকের’ মাধ্যমে অপরাধ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো ও জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর নানা তৎপরতা দেখা গেছে এই বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে।
যেহেতু স্থানীয় সরকারের কাঠামোগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এর কমিটি গঠন করা হত, সে কারণে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মধ্য দিয়ে এই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কমিউনিটিভিত্তিক যে পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখেছি, সেটিও কিন্তু আশানুরূপ ফল দেয়নি। কারণ এটা ব্যক্তি স্বার্থে, রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে টাকা-পয়সা লেনদেনের অভিযোগ আছে।”
“কমিউনিটিভিত্তিক যে পুলিশি ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছিল, সেটার কোনোটাই সফল হয়নি। কারণ আমাদের এখানে যাকেই যখন আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই আইনকে মিসইউজ, অ্যাবিউজ করেছে।”
ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা কতটা?
বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক করার’ প্রশ্নে পুলিশের ‘ঘাটতি পূরণে’ বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘অক্সিলারি ফোর্সের’ উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় তাদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়াকে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক।
তিনি বলেন, “এই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা তো যে কাউকে দেওয়া যায় না। এখানে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাকে পুঁজি করে কেউ তার ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা পূর্ব শত্রুতার বশে বা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়া অথবা অপরাধ করলেও কাউকে ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ লেনদেনের ব্যাপারগুলো ঘটানোর আশঙ্কা থাকে।”
বর্তমানের ‘এলোমেলো অবস্থায়’ তাদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি ‘নজরদারির’ বিষয়ে জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তৌহিদুল হক বলেন, “যেহেতু পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুরু করলে একটা বাস্তবতা বুঝতে পারা যাবে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে যদি জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকে, এটা আসলে মোটাদাগে যে উদ্দেশ্যে করা সেটিতো হবেই না বরং পুলিশের জন্য আরও নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলো খুব অল্প সময়ের জন্য নেওয়া হচ্ছে, সাময়িক বন্দোবস্ত। কোনো অসুবিধা নাই। যারা কাজ করে ডিপার্টমেন্টের, তারা মিসইউজ করে না? তারা সুপারভিশনে থাকে, এরাও সুপারভিশনে থাকবে।
“সুপারভিশন করতে হবে ঠিকমত, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে আর লোকগুলো ভেরিফাইড হতে হবে। লোকজনগুলো দেখে নিতে হবে, আর স্বল্প কিছু ট্রেনিং দিলেই যথেষ্ট। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ঠিক আছে।”