গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
Published : 09 Apr 2024, 06:09 PM
সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকদের চলতি মাসেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে বন্দি নাবিকদের চলতি মাসেই সুষ্ঠুভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হচ্ছে আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।
“এটা কোনো ছোট ঘটনা না, অনেক বড় ঘটনা; কাজেই দিন-তারিখ দিয়ে এটার সমাধান করা সম্ভব না। সম্পূর্ণ ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, আমরা নাবিকদের সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।"
মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল জাহাজটি। জিম্মি ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।
অস্ত্রের মুখে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সেখানে পৌঁছানোর পর বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুদের সাথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় জাহাজের মালিকপক্ষের।
এমভি আব্দুল্লাহ এবং এর ২৩ নাবিককে উদ্ধারে অগ্রগতি হওয়ার তথ্য গত কয়েকদিন ধরেই বলে আসছে সরকার।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে নাবিকদের যেন দেশে আনতে পারি। কিন্তু সেই টার্গেটটা পূরণ করতে পারিনি, সেটা সমস্যা হয়েছে। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।”
উদ্ধার তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই জিনিসটার সমাধান করার চেষ্টা করছি। তবে আমাদের নৌপরিবহন অধিদপ্তর আন্তর্জাতিক এলাকায় কাজ করে, তারাও খোঁজ-খবর রাখছেন। সার্বিক বিবেচনায় বলছি, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাইনি।
“আমাদের সঙ্গে নাবিকদের যোগাযোগ হচ্ছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরও নিয়মিত যোগযোগ রাখছেন। কথাবার্তা হচ্ছে। তারা ভালো আছে। বিষয়টি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হবে। এখন দস্যুদের সঙ্গে আচরণটা কীভাবে হয়, এই ধরনের আলোচনা করার জন্য কিছু কিছু সংগঠন আছে, মানুষ আছে, তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে।"
আলোচনা প্রসঙ্গে খালিদ বলেন, “আমরা তো কখনো দস্যুদের মোকাবিলা করিনি। কাজেই আমরা বলতে পারব না- কীভাবে আলোচনা হচ্ছে। যারা দস্যুদের সঙ্গে চলাফেরা করেন, সেই মানুষদের মাধ্যমেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে।
“এর আগে ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে যখন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ আটকে গেল, তখনও এই ধরনের কিছু সাহায্য নিয়ে সমাধান করেছিলাম। ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ঠ তৎপর ছিলেন। তার সহায়তায় আমরা সেটির দ্রুত সমাধান করতে পেরেছি।"
নৌপথে চাপ আছে, ভোগান্তি নেই
ঈদযাত্রা প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘরফেরা মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে না। নৌপথে চাপ থাকলেও কোনো ভোগান্তি নেই। ঈদযাত্রার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব।
“কারণ তিনি মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির (বহুমুখী সংযোগ) কথা ১৯৯৬ সালে প্রথম বলেছিলেন। বাংলাদেশের তিনি এই বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছেন। আকাশপথ, রেলপথ ও সড়কপথ- যা দেখেন, যে পরিমাণ অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে- তা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সময়েই হয়েছে।
“বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে ছিল দক্ষিণাঞ্চল। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলকে যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু। একটি পদ্মাসেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় কী ধরনের শৃঙ্খলা আনতে পারে, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি।"
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নৌপথে ভোগান্তি নাই, চাপ বলা যেতে পারে। (লক্ষ্মীপুরের) মজু চৌধুরী ঘাটের আজকের চিত্রের কথা বলি, সেখানে অতিরিক্ত চাপ ছিল, ভোগান্তি ছিল না। যাদের ভোগান্তির কথা বলছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, এটিই ঈদের আনন্দ। এখন কোনটা আমি ধরব বলেন?
“আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরমধ্যে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতেই পারে। কারণ আমরা মানব কাঠামোর উন্নয়নে এখনো ওই জায়গায় যেতে পারিনি।"