“প্রথম দিকে ছররা গুলির রোগী ছিল, পরে বুলেট ইনজুরি, কিছু ছিল মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাতের।”
Published : 30 Aug 2024, 12:57 AM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহত হয়ে দুই হাজার ৬১৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে ৮২৯ জনকে ভর্তি করা হয়, যাদের ৭৯ শতাংশই গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী আন্দোলনে আহত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭২ জন। এদের মধ্যে ৮৪ জনকে আনা হয় মৃত অবস্থায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৮৮ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৮৮ জন।
এদের সবার চিকিৎসা খরচ সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পরিচালক।
বৃহস্পতিবার দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর নতুন করে হাতে নেওয়া ১০০ দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হঠাৎ করে এত বেশি রোগীর চাপ কীভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরেন হাসপাতাল পরিচালক। তিনি বলেন, “আমাদের ২৬শ বেডের হাসপাতালে রোগী থাকে তিন থেকে চার হাজার। এর মধ্যে এত রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
“আমরা সে সময়ে কর্মচারী কর্মকর্তা, নার্স, সবার ছুটি বাতিল করে দিয়ে তাদের সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছিল। দিনে রাতে সার্বক্ষণিক রোগীদের সেবায় কাজ করেছেন।”
আন্দোলনের সময় হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৬৯৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১৭৯ জনের জরুরি অপারেশন হয়েছে নাক-কান-গলা বিভাগে। এছাড়া ক্যাজুয়ালটি বিভাগের ১১৪ জন, অর্থপেডিক্স বিভাগের ১০৫ জন, চক্ষু বিভাগের ৮৪ জনের সার্জারি হয়।
রোগীদের জখমের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, “প্রথম দিকে ছররা গুলির রোগী ছিল, পরে বুলেট ইনজুরি, কিছু ছিল মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাতের।”
এত রোগী কেন ইএনটি বিভাগের চিকিৎসা নিয়েছে জানতে চাইলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, “সবই মাইনর। ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মুখমণ্ডল, ঘাড়ে, গলায়, কানে গুলি লেগেছিল বলে তারা এখানে চিকিৎসা নেয়।”
তবে নিহতের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া ‘মুশকিল’ উল্লেখ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, “অনেককেই জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর মৃত ঘোষণা করলে তার মরদেহ স্বজনরা জোর করে নিয়ে গেছেন।”
ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ১৯ জনের বয়স ১২ বছরের মধ্যে। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা ১৬৬ জন। আর ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগী সবচেয়ে বেশি ৪১২ জন।
এক প্রশ্নে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতজনের, এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০ জন। এদের কয়েকজনকে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনেকের শরীরে গুলি আছে। এ নিয়ে তাদের ট্রমা কাজ করছে। তাদের কাউন্সেলিং করতে হবে।