ব্যাংক হিসাবগুলোতে সাড়ে ২০ কোটি টাকা রয়েছে। ৫ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশও দিয়েছে আদালত।
Published : 13 Apr 2025, 07:20 PM
সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সাড়ে নয় একর জমি ও তিনটি গাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ২০ কোটি টাকা এবং ১৬ কোম্পানিতে থাকা ৫ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য দিয়েছেন।
এদিন দুদকের উপসহকারী পরিচালক আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ৭ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ৯৩৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নিজের ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে ১৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ১১৭ টাকার ‘অস্বাভাবিক লেনদেন’ করেছেন। এর মধ্যে ৭৩ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৯ টাকা জমা ও ৬৬ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৮ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
দুদক বলেছে, মানি লন্ডারিং সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষের’ মাধ্যমে পাওয়া সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে অর্থ ‘হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর’ করায় সংস্থা সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ মামলার তদন্তকালে নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, স্থায়ী আমানত-এফডিআরসহ অন্য হিসাবের অর্থ এবং স্থাবর সম্পদ অন্যত্র ‘হস্তান্তর, স্থানান্তর, বা বেহাতের’ চেষ্টা করছেন।
মামলা নিষ্পত্তির আগে এসব সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ রয়েছে বলে মনে করছে দুদক।
আবেদন শুনানির পর আদালতে তাজুল ইসলামের ঢাকা, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে থাকা ৯ দশমিক ৪৫ একর জমি, কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে থাকা দুইটি বাণিজ্যিক স্পেস, একটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান জব্দের আদেশ দিয়েছে। এ তালিকায় তিনটি গাড়িও রয়েছে, যেগুলোর দাম ২ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪১ টাকা।
এছাড়াও সাবেক এই মন্ত্রীর নিজের ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৩৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, এসব হিসাবে ২০ কোটি ৫৬ লাখ একহাজার ২৩৭ টাকা জমা রয়েছে।
একই সঙ্গে আদালত ১৬ কোম্পানিতে থাকা তার ৫ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ২৩০ টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। তার পর থেকে তাজুল ইসলামকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত অগাস্টেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ২২ জানুয়ারি তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক।
দুইজনের বিরুদ্ধে মোট ১৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ৯৪১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার উৎস তার জানা আয়ের উৎসের সঙ্গে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলছে দুদক।
ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের টিকেটে কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে কুমিল্লা ৯ আসন (সেই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় প্রথম অন্তর্ভুক্ত হন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে গঠিত পঞ্চম মন্ত্রিসভায়ও একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।