“দুদকে আনার পরে তার জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তাকে আদালতে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়া হয়,” বলেন দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।
Published : 16 Oct 2024, 10:16 PM
একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি টাকার সার্ভার ও ইউপিএস কেনার অর্থ নয়-ছয়ের মামলায় ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রকে গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে দুদক।
ওই মামলায় হাই কোর্ট থেকে দুই মাসের আগাম জামিনে রয়েছেন সুধাংশু। দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, জামিনের বিষয়টি তারা জানতেন না। গ্রেপ্তারের সময় সুধাংশু শেখরও ‘বিষয়টি বলেননি’।
মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর দুদক কার্যালয়ে নিয়ে জামিনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হয়। এরপর বুধবার বিকাল ৪টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তারের সময় হাই কোর্ট থেকে দুই মাসের আগাম জামিনের বিষয়টি তিনি জানাননি। দুদকে আনার পরে তার জামিনের বিষয়টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানালে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তাকে আদালতে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, “তিনি এই মামলায় জামিনে আছেন, বিষয়টি বলেননি। এখানে আনার পরে মনে হয়েছে তাকে তো দুদকে ঢোকানো হচ্ছে, তখন তার মনে হয়েছে তিনি তো দুদকের মামলায় জামিনে আছেন।
“দুই মাসের আগাম জামিনে ছিলেন, এটা জানার পর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আর আদালতে সোপর্দ করা হয়নি।”
সুধাংশুর আইনজীবী মিন্টু কুমার মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি জামিনে আছেন। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়টি অবহিত করা হলেও দুদক অফিস থেকে তাকে ছাড়া হয়নি। পরে বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেহেতু তিনি উচ্চ আদালত ও ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে জামিনে আছেন, এটি জানার পর তারা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
“জর্জ কোর্ট পর্যন্ত নিয়েও কোর্টে উপস্থাপন না করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিকাল ৪টার সময় তাকে তার ছেলের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”
এ আইনজীবী বলেন, “সুধাংশু শেখর গত ২ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন। জামিনে থাকা অবস্থায় রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে আমি জানার পর দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাই, তিনি জামিনে আছেন তাকে কেন গ্রেপ্তার করলেন। কিন্তু কোনো অনুরোধের তোয়াক্কা না করে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দুদকে নেওয়া হয়।”
১৫ কোটি নয়-ছয়ের অভিযোগে গত ২০ অগাস্ট সুধাংশু শেখরের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ।
অভিযোগে বলা হয়, ‘পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিফোন শিল্প সংস্থা থেকে ৫০০টি এইচপি সার্ভার এবং উইনার ইউপিএসসহ অন্যান্য ইলেট্রেনিক সামগ্রী কেনা হয়। পরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ডাকঘরে বিতরণ করা হয় সেসব সরঞ্জাম।
এসব যন্ত্রের কোনোটিই ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেশিন ও যন্ত্রাংশ প্যাকেটজাত অবস্থাতেই পড়ে ছিল। এসব মেশিন কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তার কোনো নির্দেশনা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ না দেওয়ায় যন্ত্রগুলো কোনো কাজে আসেনি।
এ কারণে সুধাংশুর বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯ এর ২৩ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালে দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল সুধাংশু শেখর ভদ্রকে।
আরও পড়ুন-