এক পর্যায়ে জনারণ্য হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশেপাশের পুরো এলাকা।
Published : 12 Apr 2025, 05:08 PM
ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হওয়া হাজার হাজার মানুষ।
শনিবার বিকাল সোয়া ৩টায় এ সমাবেশ শুরু হয়; সেখানে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে।
দুপুর ২টায় ‘মার্চ ফর গাজা’ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর আগে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী শাহবাগের উদ্দেশে আসতে থাকে।
এই কর্মসূচি ঘিরে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন; জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ’; ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন'; ‘ইসরায়েলের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও' ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে সোহরাওয়ার্দীদের জমায়েত মানুষ।
এক পর্যায়ে জনারণ্য হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশেপাশের পুরো এলাকা।
এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পোস্টারে জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা যায় অনেককে।
সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনে জনতা ও নিরীহ শিশু হত্যার প্রতিবাদে প্রতীকি লাশ ও কফিন নিয়েও মিছিল করতে দেখা যায় অনেককে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক।
এছাড়া, সংহতি জানিয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিঞা গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিশের একাংশের মহাসচিব মামুনুল হক, ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়েখ আহমাদুল্লাহ।
কর্মসূচির আয়োজক প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “এই প্রথম দেশের সকল রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়াতে উপস্থিত হয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করবে।”
ইউরোপ-আমেরিকা সহ বিশ্বজুড়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ রাজপথে নেমে এসে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে গাজায় চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় এই কর্মসূচি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাদের বাড়তি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যরা মেতায়েন রয়েছেন। সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিন সকাল থেকেই বাংলামোটর, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর ও মৎস্য ভবন এলাকা জুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিকাল পর্যন্ত মিছিলের স্রোত, যানজট
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী ঢাকার সড়কে মিছিলের স্রোত শুরু হয় কাল থেকে, যা চলছিল বিকাল ৪টার পরও।
পুলিশ বলছে, সরকারি ছুটির দিন হলও এর প্রভাব রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে গিয়ে পড়েছে। ফলে সে সব সড়কে যানজট লেগে যায়।
তবে ঢাকার কিছু কিছু সড়ক একেবারেই ফাঁকা ছিল।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, অনেকেই ঝামেলা এড়াতে গাড়ি বের করছেন না আবার অনেক গাড়ি সোহরাওয়ার্দীর দিকে চলে যাওয়ায় কিছু সড়কে চাপ কমে গেছে।
শ্যামলী শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও মোড় যেতে বেতার ভবন থেকে যানজট দেখা যায়। ফলে আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত যেতে অন্তত আধা ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে সাধারণ বাস যাত্রীদের।
মিরপুর থেকে বিজয় সরণিমুখী বাস, মিনি ট্রাকগুলোর মিছিল থামানোর সুযোগ না হওয়ায় আশেপাশের সড়কগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি হয়।
ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের অপারেটর মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজধানীর কোনো সড়কে আর ফাঁকা নেই। কোনো কোনো সড়ক সচল রাখতে ডাইভারশন করা হচ্ছে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী যানবাহনের চাপ বেশি হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় ডাইভারশন করে দিতে হচ্ছে।
তবে ছুটির দিন হওয়ায় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি কর্মসূচি থাকায় অনেকেই গাড়ি বের করেননি জনিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কাঁটাবন সায়েন্স ল্যাবরেটরিসহ আশেপাশের সড়কগুলোতে ডাইভারশন করে দিয়ে ঘুরে যেতে বলেছি। জ্যামে না পড়ে বিপরীতমুখে ফাঁকা রাস্তা গুলো দিয়ে একটু ঘুরে গেলে সহজে যেতে পারবে বলা হচ্ছে।”