ঢাকায় লোড শেডিংয়েও যাতে থেমে থাকতে না হয় সেজন্য জাতীয় গ্রিডের সব বিকল্পের সঙ্গে সংযোগ থাকবে এটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থার।
Published : 29 Dec 2022, 08:27 PM
দ্রুত গতির মেট্রো ট্রেন চালাতে লাগে বিদুৎ; হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ হলেও এ ট্রেন ব্যাটারির ব্যাকআপে নিশ্চিন্তে পৌঁছাবে পরের স্টেশনে।
আর ঢাকায় লোড শেডিংয়েও যাতে থেমে থাকতে না হয়, সেজন্য বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জাতীয় গ্রিডের সবগুলো বিকল্পের সঙ্গে সংযোগ থাকবে মেট্রো সিস্টেমের; ফলে দেশের কোথাও বিদ্যুৎ থাকলেই ট্রেন চলবে নিরবচ্ছিন্ন।
পুরো প্রকল্প শেষ হলে মেট্রোরেলে চলবে উত্তরা টু মতিঝিল। যাত্রী নিয়ে ছয় কোচের একসেট ট্রেনের ২১ কিলোমিটারের এ পথ একবার পাড়ি দিতে এখনকার হিসাব অনুযায়ী লাগবে ৮০০ থেকে ১২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) একজন ব্যবস্থাপক জানান, আপাতত স্বল্প সময় চললেও পুরো চালু হওয়ার পর এ পথে সারা দিনে উভয় দিকে সাড়ে তিন মিনিট পরপর চলবে ২৪ সেট ট্রেন। সে হিসাবে এসব বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচলে প্রতিদিন লাগবে ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
মেট্রোরেলের এ রুট মতিঝিল থেকে সম্প্রসারণ হয়ে যাবে কমলাপুর পর্যন্ত। প্রথমধাপের পুরো কাজ শেষের আগেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী কোম্পানি ডিএমটিসিএল দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালাতে বিদ্যুৎ নেবে জাতীয় গ্রিড থেকে; যেজন্য তিনটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
উত্তরা টু মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন ৬ এ ট্রেন পরিচালনায় দৈনিক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে তা একটি সাধারণ জেলা শহরের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় সমান বলে জানাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মকর্তা।
এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক শেখ খলিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ছয় কোচের মেট্রোরেলের এক সেট ট্রেন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ যাত্রী নিয়ে পৌঁছাতে প্রায় ৮০০ থেকে ১২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত লোড নেবে।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের ট্যারিফ ও ভ্যাটসহ এজন্য গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকার মত বিদ্যুৎ খরচের প্রাথমিক হিসাব কষার তথ্য জানান তিনি। যাত্রীর সংখ্যা এবং স্টেশনে বিরতির উপর নির্ভর করে এ হিসাব এদিক সেদিক হবে।
তবে প্রথম দফায় উত্তরা থেকে আগাগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে তার হিসাব জানাতে পারেননি তিনি।
তিন উপকেন্দ্র থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে মেট্রোরেলের উত্তরা ডিপো ও মতিঝিলে দুটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উভয় উপকেন্দ্রে ১৩২ কিলো ভোল্ট সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আসবে।
মতিঝিল উপকেন্দ্রে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মানিকনগর গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে এবং উত্তরা উপকেন্দ্র পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড উপকেন্দ্র ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড উপকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
তৃতীয় উপকেন্দ্রটি মিরপুর শেওড়াপাড়ার মেট্রো স্টেশনে নির্মাণ করা হয়েছে। ডেসকোর পুরাতন বিমানবন্দরের ৩৩ কেভি উপকেন্দ্র থেকে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। বঙ্গভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য স্থাপিত বিশেষ এ উপকেন্দ্র থেকে এ সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানান ব্যবস্থাপক শেখ খলীল।
গ্রিড বিপর্যয়েও চলবে ট্রেন
মেট্রোরেলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের সব বিকল্প রাখা হয়েছে জানিয়ে ডিএমটিসিএলের এ ব্যবস্থাপক বলেন, এরপরও কোনো সময়ে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ হলে মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেমে থাকা ব্যাটারির ব্যাকআপ থেকে তাৎক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে ওই ট্রেনকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে।
ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, প্রকল্পের সমীক্ষার সময়ই গ্রিড বন্ধের মত বিপর্যয়ের বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য জাতীয় গ্রিডের বিকল্প সংযোগ ও উপকেন্দ্র করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটায় লোড শেডিং হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয়টা থেকে বিদ্যুৎ আসবে। দ্বিতীয়টিতে বিঘ্ন হলে তৃতীয় উপকেন্দ্র মেট্রোরেলকে সচল রাখবে।
জাতীয় গ্রিডে যত অঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ আসে সব লাইন থেকেই এ তিন উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ আসবে বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ লাগবে একটি জেলা শহরের সমান
মেট্রোরেলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, তা দেশের মাঝারি আকারের একটি জেলা শহরের সমান।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য মো. আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব জেলা বা উপজেলার বিদ্যুৎ চাহিদা সমান নয়। অনেক শহরে বা পাশে শিল্প কারখানা রয়েছে। আবার শিল্প না থাকলেও জনসংখ্যা এবং গ্রাহক বেশি থাকায় কিছু শহরে তা বেশি। সাধারণ একটি জেলা শহরে গড়ে দৈনিক ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলী যতিন মল্লিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার জেলার মুজিবনগর উপজেলায় শীতের সময় লাগে ৬ মেগাওয়াট। গরমের সময় যা ১০ মেগাওয়াটে পৌঁছায়। মেহেরপুর জেলা শহরে শীতে লাগে ১০ মেগাওয়াট এবং গরমে প্রায় ১৫ মেগাওয়াট। পাশের চুয়াডাঙ্গায় শীতে প্রায় ১২ মেগাওয়াট এবং গরমে লাগে ১৬ মেগাওয়াট।