“প্রশাসনে স্থবিরতা আছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা লক্ষ্য করছি,” বলেন তিনি।
Published : 12 Sep 2024, 07:46 PM
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে নিহতদের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় তাদের সম্মানে অনুষ্ঠেয় ‘স্মরণ সভা’র তারিখ পেছানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “শহীদদের স্মরণ সভা আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর হচ্ছে না। কাছাকাছি কোনো সময়ে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আহত ও নিহতদের তালিকা প্রস্তুত করছে।
“এই তালিকা চূড়ান্ত করা যায়নি, তালিকা চূড়ান্ত হলে শহীদদের স্মরণ সভা আয়োজন করব।”
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম জানান, আন্দোলনের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের পাঁচজন নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭২৮ জন নিহত ও ২০ হাজার ২৬৩ জন আহতের তালিকা সরকারের কাছে এসেছে।
তিনি বলেন, “বেসরকারি বিভিন্ন উৎস অনুযায়ী ৮০০ জন শহীদের একটা তালিকা আছে। সেগুলো ভেরিফাই করা হচ্ছে।
“জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে যেন প্রতিটি জেলা থেকে একটা তালিকা পাঠানো হয়। আগামী রোববারের মধ্যে একটা চূড়ান্ত তালিকা পাওয়া যাবে।”
স্মরণ সভা পালনে মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাস হয়। বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, এই অনুষ্ঠান আয়োজনে ৫ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এরপর থেকেই ওই ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “স্মরণ সভার বাজেট নিয়ে কিছু কথা উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। ৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খরচ আরও কমের মধ্যেই হবে। সিংহভাগ খরচ মূলত ৬৪ জেলা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসা, একরাত ঢাকায় অবস্থান করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে- বিধায় খরচ হবে।
“সাজসজ্জা বা অতিরিক্ত খরচ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা একটা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। আমরা চেয়েছিলাম সব শহীদ পরিবারকে একত্রিত করা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া। এটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে।”
২১ সদস্যের জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন
সরকার পতন আন্দোলনে গত জুলাই ও অগাস্ট মাসে আহত ও নিহতদের জন্য ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি বেসরকারি স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠনের কথা আগে থেকেই বলা হচ্ছে।
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে বর্তমানে ৭ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সময়ের সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, এটা মোট ২৪ সদস্যের কমিটি হবে।
“জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। অফিসিয়ালি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই ফাউন্ডেশনের সভাপতি। শহীদ মীর মুগ্ধ’র জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান এটার সাধারণ সম্পাদক। এখন সাত সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে আরও ১৪ জন যুক্ত হয়ে ২১ সদস্যভুক্ত হবে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন।”
নাহিদ বলেন, “এই ফাউন্ডেশন শহীদ এবং আহতদের নিয়ে কাজ করবে। তাদের পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো দেখবে।
“নানারকম স্মৃতি স্তম্ভ করার মাধ্যমে তাদের স্মৃতি ধরে রাখা, নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে এর কাজ। এটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হবে। ফাউন্ডেশনের অর্থ হচ্ছে মানুষের অনুদান। সরকারিভাবেও এখানে কিছু অর্থ দেওয়া হবে।”
‘প্রশাসনে স্থবিরতা আছে’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও জানান এই দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ের সবগুলো চলমান প্রকল্প রিভিউ করা হয়েছে। যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখে একটা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দপ্তর ও সংস্থার কমিটি রয়েছে, সেগুলো বাতিল করে নতুন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
“বিগত সরকারের সময় দপ্তর ও সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদী সরকারকে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে অন্যত্র পদায়ন করা হয়েছে।”
উপদেষ্টা বলেন, চিঠিপত্র প্রেরণের জন্য একটি অনলাইন বুকিং অ্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন থেকে ঘরে বসে বুকিং করা যাবে। বিটিআরসি ১৬৬৭টি পর্ণ ওয়েবসাইট ও ৫৬০টি জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় ল্যান্ডফোন চালু করা হয়েছে।
“সেখানে ৮টি ভিস্যাট স্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে মোবাইল টাওয়ারগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিনামূল্যে জ্বালানি সরবরাহ করে জেনারেটরের মাধ্যমে দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “গণমাধ্যম কমিশন হবে। স্টেকহোল্ডার মিটিং চলছে। মূলত আইন ও নীতিমালায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যেসব আইন নিয়ে আপনাদের আপত্তি আছে, এর সবগুলোই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।”
প্রশাসনে স্থবিরতা চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রশাসনে স্থবিরতা আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা লক্ষ্য করছি। যেহেতু অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি, সেহেতু সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না।
“নানা দিক থেকে নানান সমস্যা আসছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যা ফেইস করতে হচ্ছে। তবে প্রশাসন ঢেলে সাজাচ্ছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থবিরতা কমে যাবে। সেক্রেটারিয়েট ক্যু বা এই ধরনের সম্ভাবনা নেই। তবে একটা স্থবিরতা আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থবিরতা কেটে যাবে।”