“ইসলাম নারীর অগ্রগতিতে সহায়ক হলেও অজ্ঞতার কারণে পূর্ববঙ্গের মুসলিম নারীর জাগরণে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।”
Published : 22 May 2024, 05:54 PM
দেশভাগের বিষয়টি আলোচনার বাইরে রেখে বাংলার নারী জাগরণের বিষয়টি বোঝা যাবে না বলে মনে করেন ভারতের মুর্শিদাবাদের ইতিহাস গবেষক হাসিবুর রহমান।
তিনি বলেছেন, দেশভাগের যথার্থ ইতিহাস এখনো লেখা হয়নি।
বুধবার বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত নুরজাহান মুরশিদ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
‘মুর্শিদাবাদ অনুষঙ্গ ও বিশ শতকের নারী জাগরণ’ বিষয়ক এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে নূরজাহান-সারওয়ার মুরশিদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘উত্তরসূরী’।
বাঙালি মুসলিম নারীর উত্থান-পর্বের অগ্রপথিক নূরজাহান মুরশিদের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ২২ মে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার জীবন ও সময়ের ওপর আলোকপাত করেন পশ্চিমবঙ্গের দুই আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মুর্শিদাবাদের ইতিহাস গবেষক হাসিবুর রহমান এবং দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন মুর্শিদাবাদ ইতিহাস চর্চাকেন্দ্রের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম।
‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ গানের সঙ্গে নৃত্যনন্দনের শিল্পীদের নাচের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
পরে আলোচনা পর্বে হাসিবুর রহমান বলেন, “বিশ শতকের নারী জাগরণের আলোচনা করতে গেলে যে নামটি সবার আগেই চলে আসে, তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি পথিকৃৎ। বিশ শতকে নারীর যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন পূর্ববঙ্গের। তবে কেউ কেউ আছেন মুর্শিদাবাদ বা বীরভূমের।”
মুর্শিদাবাদ থেকে দেশভাগের ক্ষত বুকে নিয়ে পূর্ববঙ্গে আসা অনেক গুণিজনের পারিবারিক তথ্যও তুলে ধরেন তিনি।
বাল্যবিবাহ, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা বিশ শতকের মুসলিম নারী জাগরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল উল্লেখ করে হাসিবুর রহমান বলেন, “নারীর এখন যে অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি, তার ভিতটা যারা গড়েছেন, নূরজাহান মুরশিদ তাদের অন্যতম।
“তাদের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করতে হবে। সমকালের গতি-প্রকৃতি বুঝে নিয়েই ইতিহাসকে বুঝতে হবে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানের আরেক বক্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “ইতিহাসের পাঠ জরুরি, কারণ ইতিহাস বর্তমান গঠনে সাহায্য করে। ইসলাম নারীর অগ্রগতিতে সহায়ক হলেও অজ্ঞতার কারণে পূর্ববঙ্গের মুসলিম নারীর জাগরণে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
“সেখান থেকে যে কজন নারী মুসলিম নারীদের পথ দেখিয়েছেন নূরজাহান মুরশিদ তাদের অন্যতম।”
সোনিয়া আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।
তিনি বলেন, “ইতিহাসকে পড়তে হয় সভ্যতার অগ্রগতির জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা লিংক খুঁজে পান।”
বাংলা একাডেমি এবং ‘উত্তরসূরী’ একসঙ্গে কিছু করার পরিকল্পনা করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “নূরজাহান মুরশিদের পরিবার থেকে বা ‘উত্তরসূরী’ থেকে গবেষণা বৃত্তি দেয়ার ব্যাপারে ভাবা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির কিছু করণীয় থাকলে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে সোনিয়া আমিন বলেন, “দেশভাগের কারণে বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে দুই বাংলায় আমরা ভিন্ন, আবার আমরা একই। এপার বাংলা, ওপার বাংলার নারী জাগরণের একটা যোগসূত্র আছে।”
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ‘উত্তরসূরী’র মহাসচিব শারমীন মুরশিদ বলেন, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চায় ভূমিকা রাখা শিল্পী-সাহিত্যিকদের কাজকে সংরক্ষণ করার প্রয়াস নিয়ে তিন বছর ধরে পথ চলছে 'উত্তরসূরী'। তারই অংশ হিসেবে এই স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষ হয় গানের দল সমগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।