সোমালিয়া উপকূলে এমভি আবদুল্লাহ, নজর রাখছে ‘অপারেশন আটলান্টা’

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছেছে বলে জানতে পেরেছে জাহাজের মালিকপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2024, 08:47 AM
Updated : 14 March 2024, 08:47 AM

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছেছে। একটি ইউরোপীয় জাহাজ থেকে আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স-ইইউএনএভিএফওআর, যাদের কার্যক্রম অপারেশন আটলান্টা হিসেবে পরিচিত।

পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদস্যুতা নির্মূলে কাজ করে যাওয়া এই ইউরোপীয় নৌ নিরাপত্তা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অপারেশন আটলান্টার অংশ হিসেবে তারা সোমালিয়া উপকূলে একটি জাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই জাহাজটি বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে।

এবিসি নিউজ লিখেছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ১১০০ কিলোমিটার দূরে এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মির খবর মঙ্গলবার প্রথম জানতে পারে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়া পথে দুস্যদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে।

দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার সময় এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষ ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন নাবিকরা। মুক্তিপণ না দিলে দস্যুরা তাদের মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে বলেও জানান।

তবে এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিকল্প হিসেবে ‘সেকেন্ড পার্টির’ মাধ্যমে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেছেন, “ইতোমধ্যে রিপোর্টিং সেন্টার ইন কুয়ালালামপুর, ইন্ডিয়ান ফিউশন সেন্টার ইন নিউ দিল্লি, তারপর সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে, চায়নাসহ সকল এরিয়াল নেভাল শিপে জানানো হয়েছে। অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

এদিকে ইইউএনএভিএফওআর তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখার পাশাপাশি ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য অপারেশন আটলান্টার পক্ষ থেকে সোমালিয়া ও বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় নৌবাহিনীসহ সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা।

সেই কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা স্পষ্ট করা না হলেও মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স এ আরেক পোস্টে ইইউএনএভিএফওআর তাদের যুদ্ধজাহাজ এবং সামরিক বিমান ‘অপারেশনের এলাকায়’ সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশ মারচেন্ট মেরিন অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সেটি সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের ২০ মাইল দূরে সাগরে নোঙ্গর ফেলে বলে তারা জানতে পেরেছে।

পরে জাহাজের মালিক এস আর শিপিং লাইনের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সময় বেলা ১টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তারা জাহাজ তীরে পৌঁছানোর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। পাশাপাশি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও জাহাজের মালিকপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মিজানুল ইসলাম বলেন, ইইউএনএভিএফওআর এর একটি জাহাজ যে এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছেন, সেটি তারা জানতে পেরেছেন। তবে বুধবার রাতে জাহাজ ঘিরে গোলাগুলির যে কথা শোনা যাচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

এবিসি নিউজ লিখেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের সামরিক অভিযানে হর্ন অব আফ্রিকা ও পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় উপকূলে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা অনেক কমে এসেছিল। তবে গত কয়েক মাসে নতুন করে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে জলদস্যুরা।

গত ডিসেম্বরে অন্তত দুটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। একটি ঘটনায় সোমালিয়ার উপকূলে ইল শহরের কাছে ভারী অস্ত্রধারী জলদস্যুরা একটি বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি করে। আরেকটি ঘটনায় মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ ছিনতাই করা হয় আরব সাগরে। ওই জাহাজটিও সোমালিয়ার একই উপকূলের দিকে নেওয়া হয়।

সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা সবথেকে বেশি হয়েছিল ২০১১ সালে। জাতিসংঘের হিসাবে, সাগরে সেসময় ১৬০টি জাহাজ ছিনতাই হয়।