“প্রচুর নারী আছে বসে বসে কাজ করছে। কিন্তু কোথায় বিক্রি করবে, কার কাছে বিক্রি করবে, কীভাবে করবে এ তথ্যগুলো তাদের কাছে নেই,” বলেন তিনি।
Published : 15 Mar 2025, 10:24 AM
দেশিয় গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে নারী উদ্যোক্তারা নানা তথ্য সংকটে ভোগেন বলে মনে করেন উদ্যোক্তা কোহিনুর ইয়াছমিন।
তিনি বলছেন, “প্রাকৃতিক পণ্যের প্রতি বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকলেও বাজারটা এখনও ধরা যাচ্ছে না। গ্রীষ্মকালের বাজারটা ধরতে হলে ওইসব দেশের ক্রেতারা কেমন ডিজাইন আর প্যাটার্ন…সেসব তথ্য পাওয়ার মত কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই।
“তারপর প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, কস্টিউম প্রাইজিং...কারণ ওটাকে ধরে ধরে আবার প্রাইজ সেট করতে হবে, মার্কেট ডিমান্ড তো আছেই…, এগুলো আমাদের যথেষ্ট গ্যাপ। এই গ্যাপের কারণে, এখানে প্রচুর নারী আছে বসে বসে কাজ করছে, কিন্তু কোথায় বিক্রি করবে, কার কাছে বিক্রি করবে কীভাবে করবে এ তথ্যগুলো তাদের কাছে নেই। যদিও এখন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তারপরও আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে।”
নারী দিবস উপলক্ষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রচারিত এক পডকাস্টে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন কোহিনুর। ক্ষুদ্র পরিসরে স্থানীয় বাজার থেকে তিনি ব্যবসা শুরু করলেও ২০১৪ সাল থেকে পণ্য রপ্তানি করছেন বিদেশে। লাইফস্টাইল ও হোম ডেকর ঘরানার পণ্য তৈরি করছেন তিনি।
নুভিস্তা ফার্মা নিবেদিত ‘অধিকার সমতা ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এই পডকাস্টে কোহিনুর বলেন, “আমার পণ্যগুলা নান্দনিক, বৈচিত্র্যময় ও কালারফুল করব, সেটাও তো আমাদের মানুষের টেস্ট বুঝে করতে হবে। এখানে যেটা গ্যাপ ডিজাইনগুলো। আমাদের প্রতিদিন একই ডিজাইন করলে কেউ কিনবে না। আড়ংয়ে যেমন ভ্যারাইটিস আছে, ওখানে গেলাম, পছন্দ করলাম, একটা পছন্দ হল না আরেকটা হল।
“কিন্তু এখানে এই যে নারীরা যাবে, কত সময় আছে যে আড়ংয়ে গিয়ে দেখবে ওরা কী ধরনের ডিজাইন করে, কী ধরনের প্রোডাক্ট বানায়। এত সময় তো ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের নেই।”
নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিলেও ব্যাংকগুলোর সহায়তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
“একটা ট্যাবু আছে মাথায় যে নারী উদ্যোক্তা খুব একটা ভালো কিছু করতে পারবে না। আমি যে টাকাটা ইনভেস্ট করব…ব্যাংকগুলোর এমন চিন্তা যে হয়ত সে আমার টাকাটা রিটার্ন করতে পারবে না। এ সবকিছু মাথায় রেখে নারী উদ্যোক্তাদের অনেক সময় অনেক ধরনের ডকুমেন্ট, ওরা হয়ত একবারে বলবে না। আজকে একটা নিয়ে গেলে ডকুমেন্ট ফিলাপ করে। কালকে বলবে ওকে, এটা নিয়ে আসেন, ওটা নিয়ে আসেন। তো একসময় ওরাও (নারী উদ্যোক্তারা) বিরক্ত হয়ে যায়।”
দেশে ফেইসবুক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে গড়ে উঠা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা এফ-কমার্সের সম্ভাবনা নিয়ে কোহিনুর বলেন, মহামারীর পর থেকে দেশে এ খাতে এগোলেও বাইরে থেকে অর্থ আনার ক্ষেত্রে এখনও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।
“অনেক নারীই কিন্তু টুকিটাকি করে, ওরা করছে। এটাও ফিউচার কিন্তু ব্রাইট। তবে ভালো হত যদি তাদেরকে প্রপার গাইডলাইন দেওয়া যেত। দিচ্ছে, কিন্তু এটা এনাফ না।”
উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে একসঙ্গে বসে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা নিলে তা বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন তিনি।
এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, বিদেশিদের বাংলাদেশ থেকে প্রাকৃতিক পণ্য কেনার ইচ্ছা রয়েছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, কার্বন এসব কারণে মহামারির পর থেকে তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
“আমার পণ্যগুলো নিয়ে যখন এক্সিবিশনে দাঁড়াই বা কাস্টমারদের বোঝাই, তখন তারা বুঝতে পারে ও এটা থেকে এটা। তাদের আগ্রহটা খুব বেশি, বাংলাদেশের হস্তশিল্প শুধু বলব না, ন্যাচারাল প্রোডাক্টের উপর তাদের আগ্রহ খুবই বেশি। কিন্তু আমরা সেভাবে বাজারটা ধরতে পারছি না।“