পরিবেশ ধ্বংসে কালো টাকার প্রভাবও দায়ী, বলেন তিনি।
Published : 17 Jan 2025, 11:45 PM
পরিবেশের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।
শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত দুদিনের এক বিশেষ সম্মেলনে রেহমান সোবহান এ কথা বলেন।
বাপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করেছে।
“কিন্তু পরিবেশের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান রইল।”
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ। আইনের বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষার কাজ বাধা পাচ্ছে।
“এ জন্য সম্মিলিতি প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাজার অর্থনীতির কারণে জমির অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। যে কারণে নদ-নদী, জলাভূমি ও বনভূমি দখল করে আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এক্ষেত্রে কালো টাকার প্রভাবও দায়ী।”
পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিকদের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে আন্দোলন করছে। ফলে দেশে অনেক যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক আইন থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
“সুফল পেতে চাইলে সকলকে একই মঞ্চে আনতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি সহজ হবে।”
তিনি বলেন, “কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো স্বপ্নই পুরণ হয়নি। বরং ওই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। আমাদের পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।”
পরিবেশ ধ্বংস করে, এমন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রেহমান সোবহান।
সম্মেলনে ‘নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামের পৃথক অধিবেশনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় এরই মধ্যে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
“প্রতিটি জেলার একটি নদীকে দখল ও দুষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীকে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
“ভারতের সঙ্গে আন্তনদী সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তার পানি সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে। ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।”
‘বাপার ২৫ বছর: পরিবেশ আন্দোলনের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি নুর মোহাম্মদ তালুকদার।
সেখানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বেন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুল লতিফ, বেন-এর গ্লোবাল সমন্বয়কারী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান, বাপা সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম ও খুশী কবির, বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।