“প্রশ্ন করি, এই ঘটনা ‘মুসলিম সংঘর্ষ সমিতি’ নামের কোন সংগঠন বাংলাদেশে করলে কেমন আক্রমনাত্মক প্রচারনায় মেতে উঠত ভারত?”
Published : 03 Dec 2024, 12:21 PM
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলার ঘটনাকে ‘ভারত সরকারের ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ভারতের ভূমিকার নিন্দা জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল; আর স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইঁয়া উষ্মা প্রকাশ করে ভারতকে ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহয়তা নেওয়ার’ পরামর্শ দিয়েছেন।
হাই কমিশনে হামলার পর ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে এসব কথা বলেছেন দুই উপদেষ্টা।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সোমবার দুপুরের দিকে ডানপন্থি একটি হিন্দু সংগঠনের আহ্বানে কিছু বিক্ষোভকারী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে হামলা চালায়। তারা সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে। পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়ে ওই বিক্ষোভ হওয়ার কথা বলা হয় এসব খবরে।
ঘটনার পর দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অপরদিকে হামলার ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হিসেবে বর্ণনা করে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ’নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ তোলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার পোস্টে লিখেছেন, “আজকে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন তছনছ করা হয়েছে, বাংলাদেশের পাতাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।
“প্রশ্ন করি, এই ঘটনা ‘মুসলিম সংঘর্ষ সমিতি’ নামের কোন সংগঠন বাংলাদেশে করলে কেমন আক্রমনাত্মক প্রচারনায় মেতে উঠত ভারত?
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাই কমিশনের নিরাপত্তার দায়িত্বের কথা ভারত সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার নিন্দা জানাই।”
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোরে দাবি তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, “ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যা ঘটে, সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের উপর, এরজন্য বরং উল্টো ভারতের এবং মমতার লজ্জিত হওয়া উচিত।”
ভারতকে উদ্দেশ্য করে আইন উপদেষ্টা বলেন, “ভারতকে বলি, আমরা সমমর্যাদা আর সমানাধিকারভিত্তিক বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। শেখ হাসিনার সরকার বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার লোভে ভারত-তোষন নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তবে ভারতকে বুঝতে হবে, এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়। এই বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম ও আত্মমর্যাদাশীল। এই বাংলাদেশ নির্ভীক একটি তরুণ সম্প্রদায়ের।”
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার পোস্টে লিখেছেন, ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাই কমিশনের নিরাপত্তা দিতে ‘ব্যর্থ হলে’ দেশটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ‘সহায়তা চাইতে পারে’।
তিনি বলেন, “সেক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য সহায়তা বাড়িয়ে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ।”
হাই কমিশনে হামলার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় হাই কমিশন ও সহকারী হাই কমিশনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।
হামলার খবর আসার পর সোমবার সন্ধ্যায় সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য জেলাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ
আগরতলা মিশনে হামলা ‘পূর্বপরিকল্পিত’, পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ ঢাকার